বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রথম দিনে আয় সাড়ে ৩ লাখ

চট্টগ্রাম বু্যরো
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রথম দিনে আয় সাড়ে ৩ লাখ

৪ হাজার শ্রমিক ও ১৫০ প্রকৌশলীর চার বছরের দিনরাত শ্রমে চট্টগ্রাম নগরের মানচিত্রে এখন প্রাণ সঞ্চার করছে ১৬ কিলোমিটারের সুদীর্ঘ উড়ালপথ। দেশিয় কারিগরি দক্ষতা ও কাঁচামালে তৈরি ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকার শহীদ ওয়াসিম আকরাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রামের যাতায়াতের ব্যবস্থায় নতুন এক মাইলফলক। এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চালুর প্রথম দিনে টোল আদায়ের মাধ্যমে আয় হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৬০০ টাকা।

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ৫ হাজার ৬৯৪টি যানবাহন চলাচল করার মাধ্যমে এই টোল আদায় হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের ওয়াসা মোড় থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর আগে নগরীতে সিডিএ তিনটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করলেও ওগুলো থেকে কোনো টোল আদায় করা হয় না। এই প্রথম চট্টগ্রামে কোনো ফ্লাইওভার থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে।

1

টোলের হার অনুযায়ী, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৩০ টাকা, কার জাতীয় গাড়িকে দিতে হবে ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রোবাসের জন্য টোলের হার ১০০ টাকা। পিকআপভ্যান থেকে নেওয়া হবে ১৫০ টাকা। মিনিবাস ও ট্রাক (চার চাকা) থেকে ২০০ টাকা করে, বাস থেকে

২৮০ টাকা নেওয়া হবে। ট্রাকের (৬ চাকা) জন্য ৩০০ টাকা এবং কাভার্ডভ্যানকে ৪৫০ টাকা টোল প্রদান করতে হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচলের সুযোগ রেখে টোলের হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে মোটরসাইকেল এবং ট্রেইলার ওঠা-নামার সুযোগ রাখা হয়নি।

জানা যায়, প্রাথমিকভাবে এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে চারটি বুথের মাধ্যমে টোল আদায় করা হবে। পরে র?্যাম্প নির্মাণ শেষ হলে আরও কয়েকটি পয়েন্ট যুক্ত করে ১০টি বুথে টোল আদায় চালু করা হবে।

চুয়েট বু্যরো অব রিসার্চ টেস্ট অ্যান্ড কনসালটেশনের এক সমীক্ষায় উলেস্নখ করা হয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে প্রতিদিন প্রায় ৮১ হাজার ৪৭১টি যানবাহন চলাচল করতে পারে। এর মধ্যে কার ও তিন চাকার যানবাহন ৩৯ হাজার ৪২৮টি, মাইক্রোবাস, ভ্যান, জিপ ৬ হাজার ৫১৩টি, মিনিবাস ও পিকআপ ৫ হাজার ৩৮টি, বাস ৩ হাজার ৩৮৯টি, ট্রাক ৫ হাজার ৬৬৪টি, লরি ও ট্রেইলর ৬৭৭টি, মোটরসাইকেল ৫ হাজার ৮১৪টি, ঠেলাগাড়ি ৫৯০টি এবং রিকশা ১৪ হাজার ৩৫৮টি।

বাস চালক জাকির বলেন, আগে তো যানজট থাকতো এখন এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে গেলে ৩০ মিনিটে যাওয়া যায়। এছাড়া আসা যাওয়া ২০০ টাকা দিতে হয় এইটা আমাদের জন্য সুবিধা আরকি।

প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ'র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়ি চলাচলে টোল আদায় শুরু হয়েছে। এখন প্রতিদিন ১০ থেকে ১১ হাজার যানবাহন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করছে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম মূল শহর থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, শহরের যানজট কমিয়ে আনার পাশাপাশি যাত্রাপথের দূরত্ব কমাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। তবে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি প্রধানমন্ত্রী এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। প্রথমে ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়।

এরপর বিভিন্ন সময় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে সবশেষ সিডিএর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজের সময় আরও একবছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এছাড়া সিডিএ ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি সাত লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে