বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

হাটহাজারীর বালুখালের বেহালদশা, বন্ধ ইরি চাষ

মো. বোরহান উদ্দিন, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম)
  ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
হাটহাজারীর বালুখালের বেহালদশা, বন্ধ ইরি চাষ
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় উপজেলার ফতেপুর ও নন্দীরহাট এলাকায় সরু হয়ে যাওয়া বালুখালি খাল -যাযাদি

হাটহাজারীতে ফতেপুর ও নন্দীরহাট এলাকার চাষাবাদের প্রাণ বালুখালি খাল ভরাট ও পশ্চিমের উজানের পানি বন্ধ করে দেয়ায় ছড়ার দুই কুলের হাজার হাজার কৃষকের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ পরিস্থিতির কারণে ইরি মৌসুমে চাষ বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগে। একদিকে চাষাবাদ ব্যাহত অপরদিকে কৃষি পেশা থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনতিবিলম্বে ছড়াটি পুনঃ খনন করে চাষাবাদ অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, ফতেপুর ইউনিয়নের পশ্চিম দিক থেকে পাহাড় থেকে উৎপত্তি বালুখালি খালের কিনারায় বসবাসকারীদের ফেলা বর্জ্যে ভরে গেছে। পশ্চিম অংশের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার চাষাবাদের অজুহাতে ছড়ার মাঝে বাধ সৃষ্টি করে পানি আটকিয়ে রাখে। ইসলামিয়াট বাদামতল, মাইজপট্টি, নন্দীরহাট এলাকা দিয়ে বয়ে ৬

1

যাওয়া ছড়ার অনেকাংশ ভরাট করে ঘর-বাড়ি, কাচারী নির্মাণ করে রেখেছে। স্থানীয়দের তথ্যমতে ছড়ার প্রস্থ ১২ থেকে ১৪ ফুট হলেও কমতে কমতে অনেক অংশে ২, ৪, ৫ ফুটে এসে থেমেছে। তবে ইতিবাচক দিক অধিকাংশ অংশে প্রাকৃতিক ভাবেই খালের অংশ ভরাট হয়ে গেছে। আঁকাবাঁকা ছড়াটি পশ্চিম থেকে শুরু করে পূর্বের নেহালপুর পেরিয়ে হালদা নদীর সংযোগ খাল বোয়ালিয়া খালে গিয়ে একত্রিত হয়েছে। খাল ঘেঁষেই রাজার বিল, সাজুয়া বিল, নেহারপুল, ছড়ারকুল, ছড়ার দক্ষিণ চিকনদন্ডী নেহালপুর বিলে শত শত জমিন রয়েছে। যেখানে হাজার হাজার কৃষক ধান, সব্জি চাষ করে যেমন পরিবারের জীবিকা সংগ্রহ করেন তেমনি স্থানীয়দের ধান-চাল, সব্জির চাহিদা মেটান। ধানের যে বাৎসরিক চাহিদা ইরি মৌসুমে চাষ হলে তা অধিক হারে বৃদ্ধি পাবে বলে যায়যায়দিনকে জানান, দুই ইউনিয়নের কৃষকরা। ফতেপুর এলাকার কৃষক শাহজাহান মো. শাহজাহান (৫৩), মো. জাহেদ (৪০), মো. শফি (৫০), এমদাদ (৬২), মো. মনছুর শাহ (৪২), মো. হারুন (৬৮), মো. সালাম (৬৩) জানান, দশ বছর আগেও এ খালের পানি দিয়ে চাষাবাদ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আর জনপ্রতিনিধিদের উদাসিনতায় আস্তে আস্তে খালটি তার রুপ হারিয়ে ফেলছে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন কৃষি অফিসার, বিএডিসি কর্মকর্তাসহ অনেকে চাষ দেখতে আসেন পানির বিষয়ে বলা হলেও কোন প্রতিকার মেলেনি। চাষের অপর নাম পানি। সঠিক সময় যদি পানি পাওয়া না যায় তাহলে চাষ হবে কিভাবে। তারা বলেন, খালটি খনন হলে যেমন উজানের পানি থাকবে প্রতিনিয়ত তেমনি হালদার জোয়ার ভাটার পানিও প্রবেশ করবে এ খালে।অপরদিকে ফতেপুর ঘাটকুল এলাকার দবীর উদ্দিন মুন্সির সড়কস্থ ফতেপুর জামতল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জোয়ার ভাটার খাল যে খালে হালদার পানি বোয়ালিয়া খাল হয়ে প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করে। ওই স্থানেই কৃষকদের সুবিধার্তে একটি সেচ পাম্প থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় আশ পাশের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে সেচ পাম্পটি পুনরায় অথবা নতুন করে সেচ পাম্পের ব্যবস্থা করলে পানির সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে। ওই এলাকার কৃষকরা জানান, সেচ পাম্প দিয়ে জোয়ার ভাটার খালের পানি বালুখালি খালে দেয়ার ব্যবস্থা করলে মাইজপট্টি, নেহারপুল ও নন্দীরহাটের অনেক বিলে পানির ব্যবস্থা হবে। পাম্পটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে চলমানরত সব্জি ক্ষেত, সরিষা, সূর্যমূখীসহ বিভিন্ন চাষে চরম দুর্ভোগে চাষিরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রম্নত আমলে নিয়ে কৃষকদের পাশে দাড়াবেন এ আশাই ব্যক্ত করেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন শিকদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাটার কথা শুনে আসছি। কৃষকরা পানি পেলে ইরি ধানও চাষ করতে পারবে। পানির অভাবে আমন মৌসুমের পর বপনকৃত সরিষা ক্ষেতে পানি দিতে হিমশিম খেতে হয় চাষিদের।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (নির্মাণ) ইউনিটের হাটহাজারী উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী দীপন চাকমা বলেন, পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে