মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

প্রদীপ নাথ হত্যা মামলার ৬ আসামি কারাগারে

চট্টগ্রাম বু্যরো
  ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
প্রদীপ নাথ হত্যা মামলার ৬ আসামি কারাগারে
প্রদীপ নাথ হত্যা মামলার ৬ আসামি কারাগারে

চট্টগ্রামে নগরের চান্দগাঁও থানার প্রদীপ নাথ হত্যা মামলার ৬ আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই ৬ আসামি চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক কাজী মিজানুর রহমান তাদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

আসামিরা হলেন- সুকলাল নাথ (৫৮), বিজয় নাথ (২৬), কমল নাথ (৪৪), সুদীপ্ত নাথ (২৪), স্বপন নাথ (৬৪) ও হৃদয় (২৫)। তারা সবাই উত্তর চান্দগাঁওয়ের নাথ পাড়ার বড় বাড়ীর বাসিন্দা। আদালতে বাদী পক্ষের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আযাহারুল হাসান ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শামসুল আলম।

অ্যাডভোকেট আযাহারুল হাসান বলেন, 'হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আসামিরা নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।'

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রদীপ নাথের হত্যাকারীরা এলাকার ভূমির দলিল জালিয়াত চক্রের সদস্য। তারা জাল-জালিয়াতির ও অর্পিত সম্পত্তি বিক্রি এবং ভুয়া দলিল সৃজনের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতো। এছাড়া তাদের পৃষ্টপোষকদের বিরুদ্ধে জালজালিয়াতি ও অর্পিত সম্পত্তির বিক্রির অভিযোগে ফৌজদারী মামলা ও দুদকে অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। কিশোর গ্যাং লালন-পালনসহ জড়িত রয়েছে নানা অপকর্মে। এসব ব্যাপারে কেউ সোচ্চার হলেই শিকার হতে হয় নির্যাতনের।

গত ২০ নভেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জুয়েল নামের এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ১৩৩১/২০২৪। মামলার এজাহারে জানা যায়, গত বছরের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন মো. জুয়েল নামে এক ব্যবসায়ীকে কিরিস, রাম দা, লাঠি, এস এস পাইপ, লোহার রড দিয়ে মারা হয়। মারধরে জুয়েলের চোখের দৃষ্টি চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। এ ঘটনায় প্রদীপ নাথ হত্যা মামলার আসামিরাও জড়িত ছিল।

জানা যায়, মামলার অনত্যম আসামি কমল নাথের বিরুদ্ধে সরকারি ভূমি দখল ও বিক্রি এবং ভুয়া দলিল সৃজনের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ একাধিক মামলা ও নানান অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় কমল নাথ মাদক সম্রাট হিসেবেও পরিচিত। সরকারি ভূমি দখলের অভিযোগে কমল নাথের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে মামলাও দায়ের করা হয়। যার মামলা নং-৮১২/২০২৪। গত বছর ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। ওইদিন জামিন চেয়ে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন তার অনুসারীরা। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষুব্ধদের হাতে খুন হন সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে একজন আইনজীবী। এসময় সাহিদুল ইসলাম মাসুম নামে এক সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে কমল নাথ ধারালো ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এ ঘটনায় গত ৬ জানুয়ারি কমল নাথসহ ২৫ জনের নাম উলেস্নখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং- ৫৫/২০২৫।

জানা যায়, মামলার এজাহার নামীয় গ্রেপ্তারকৃত আসামি শুকলাল নাথকে গত বছরের ৩০ জুলাই গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রতিবেদন মূলে সোপর্দ করা হয়। এসময় গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আবেদন করে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বর্ণিত আসামি মামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এছাড়া সুকলাল নাথ গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর অস্থায়ী জামিনে বের হয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মামলার বাদী প্রদীপ নাথের স্ত্রী বকুল দেবীকে হত্যার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় বকুল দেবী পরের দিন ১৮ সেপ্টেম্বর নগরের চান্দগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

মামলার এজাহারে বাদী উলেস্নখ করেন, 'আসামিদের সঙ্গে আমাদের পার্শ্ববর্তী ঘরের সাথে লাগানো সরকারের খাস দলীয় সম্পত্তি জায়গা নিয়া বিরোধ চলে আসছে। সরকার বাদী হয়ে কমল নাথ ও স্বপন নাথসহ সর্বমোট ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির বিষয়ে এসিল্যান্ড আমার বাড়িতে তদন্তের জন্য আসলে আমার স্বামী ওই মামলায় সাক্ষী দিলে আসামিরা আমার স্বামী সহ আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়। একপর্যায়ে আসামিরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ জীবননাশের হুমকি দেয়। তারা আমার স্বামীর পৈত্রিক জমির কিছু অংশ জোরপূর্বক দখল করে কমল নাথ চার তলা বিল্ডিং করে। গত বছরের ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার সময় চান্দগাঁও থানাধীন উত্তর চান্দগাঁও নাথ পাড়াস্থ বড় বাড়িতে আমাদের বসতগৃহের সামনে রাস্তার উপর দিয়ে আমার স্বামী প্রদীপ নাথ দোকানের যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে পূর্ব থেকে উৎ পেতে থাকা আসামি সুকলাল নাথ আমার স্বামীকে পথরোধ করে গালিগালাজ করে আমার স্বামীর বুকে ঘুষি মারে। একপর্যায়ে আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এলোপাথাড়ি আমার স্বামীর মাথায়, বুকে, পিঠে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি, লাথি মেরে গুরুতর জখম করে। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় আমার স্বামীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কর্তব্যরত ডাক্তার মৃতু্যর কারণ 'শারীরিক আক্রমন' বলে সনদপত্রে উলেস্নখ করেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে