রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের পর্দা উঠছে বৃহস্পতিবার। এদিন বিকাল সাড়ে চারটায় বোধনসঙ্গীত 'এই কথাটা ধরে রাখিস, মুক্তি তোরে পেতেই হবে' গাওয়ার মধ্য দিয়ে অধিবেশনের উদ্বোধন হবে। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ্ আয়োজিত তিনদিনের ৪৩তম বার্ষিক অধিবেশন শেষ হবে আগামী ২৫ জানুয়ারি। দেশের পাঁচ শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠকের অংশ নেবেন এই আয়োজনে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সহসভাপতি সারওয়ার আলীর সভাপতিত্বে আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সম্পাদক তানিয়া মান্নান।
তিনি বলেন, 'সম্মেলন উদ্বোধন করবেন সংগীতগুণি ফাহমিদা খাতুন। প্রধান অতিথি থাকবেন চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। এই আয়োজনে রবীন্দ্রপদক দিয়ে গুণি সম্মাননা জানানো হবে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রয়াত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ারকে।'
তানিয়া মান্নান জানান, তিনদিনের আয়োজন সাজানো হয়েছে উদ্বোধনী আলোচনা, সেমিনার, রবিরশ্মি, গীতি আলেখ্য, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও গান দিয়ে। প্রতিদিন জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। এছাড়া রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, প্রদীপ প্রজ্জ্বালন ও সংগঠনের প্রতিনিধি সমাবেশ।'
তিনি জানান, অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন বিকাল চারটায় অনুষ্ঠিত হবে, 'বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ' শীর্ষক সেমিনার। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সহসভাপতি মফিদুল হকের সভাপতিত্বে ওই দিনের সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। আলোচনায় অংশ নেবেন আলম খোরশেদ ও হামীম কামরুল হক।
শেষের দিন বিকাল সাড়ে তিনটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের এ যাবৎকাল পরিচালিত কার্যক্রমের উপস্থাপনাও তুলে ধরা হবে সমাপনীতে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে যথারীতি এবারও রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নানা দিক নিয়ে বিশিষ্টজনদের লেখা প্রবন্ধের সংকলন 'সঙ্গীত সংস্কৃতি' প্রকাশিত হচ্ছে।
তানিয়া মান্নান জানান, ১৯৭৯ সালে শিল্পী জাহিদুর রহিমের প্রয়াণ দিবসে যাত্রা শুরু হয় 'জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদের'। দেশব্যাপী বৃহত্তর পরিসরে কর্মকান্ড পরিচালনার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮১ সালে বিভাগীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রতিযোগিতা ও সম্মেলন অনুষ্ঠানসহ প্রথম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজন করে 'জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ'। ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে এই সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপকতর ভিত্তিতে 'দ্বিতীয় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদ' গঠন করা হয়। এবং দ্বিতীয় জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
দেশব্যাপী বৃহত্তর পরিসরে কর্মকান্ড পরিচালনা করার লক্ষ্য নিয়ে পরবর্তীকালে বাঙালির চিরকালের সঙ্গী রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত করে সংগঠনের নাম করা হয় 'জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ'। বর্তমানে দেশে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের ৮২টি সক্রিয় শাখা রয়েছে। নাম পরিবর্তন হলেও অব্যাহত আছে শিল্পী জাহিদুর রহিমের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য 'জাহিদুর রহিম স্মৃতি পুরস্কার' প্রতিযোগিতার আয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে সারওয়ার আলী বলেন, 'বাঙালির সব ধরনের সংকটে রবীন্দ্রনাথ আছেন। অন্তর্বর্তীকালিন এই সময়ের ইঙ্গিতপূর্ণ নানা ঘটনা আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে। দেশের পট পরিবর্তনের পর রবীন্দ্রনাথ, লালন, শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিনসহ নানা ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় আমাদের আশঙ্কা, বাঙালিকে শেকড়চু্যত-বিচ্ছিন্ন করতে চায় কোনো অপশক্তি। এমন সংকটকালীন সময়ে রবীন্দ্রনাথ আমাদের পথ দেখাতে পারেন। তিনি চিরকাল বাঙালির অবলম্বন। তিনিসহ বাঙালি গুলিদের সব সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আমরা যদি সবার কাছে পৌঁছাতে পারি তাহলে এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।'
সহ-সভাপতি আমিনুল হক বাবুল বলেন, 'আমরা জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে তাদের জাতীয় সঙ্গীতের মর্মবাণী তুলে ধরি। আমরা চাই, এভাবেই আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের মর্মবাণী সবার অন্তরে পৌঁছাতে।'
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের সহসভাপতি ও সঞ্চালক বুলবুল ইসলাম। এতে আরো বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি আমিনুল হক বাবুল এবং লাইসা আহমদ লিসা। উপস্থিত ছিলেন সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য আবুল ফারাহ পলাশ, সদস্য দিলীপ দত্ত, মামুনুর রশিদ ও রশীদ আল্-হেলাল।