দেশে পর্যাপ্ত ভোজ্যতেল আমদানি হওয়ার পরও বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে এই নিত্যপণ্যের। ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি মোকাম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চাহিদার অর্ধেকও মিলছে না ভোজ্যতেল। এ কারণে ভোক্তারা খুচরা বাজারে হন্যে হয়ে খুঁজেও চাহিদামতো তেল কিনতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক জায়গায় ভোজ্যতেল মিললেও প্রতি লিটারে বাড়তি ১৫ থেকে ২০ টাকা গুনতে হচ্ছে। কিছুদিন আগেও বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায় পাওয়া যেত। একই তেল কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা। স্থানীয় দোকানে দাম পড়ছে প্রায় ২০০ টাকা। এতে নাভিশ্বাস ভোক্তাদের। ক্রেতা চাহিদার শীর্ষে থাকা এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট বেশি। পরিবেশকদের কাছে বারবার তাগাদা দিয়েও তেল সরবরাহ না করার অভিযোগ বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর। রমজানকে টার্গেট করে অসাধু ব্যবসায়ী, করপোরেট, শিল্প গ্রম্নপ ও মিল মালিকরা কারসাজি করে বাজার থেকে ভোজ্যতেল উধাও করছেন বলে অভিযোগ কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (ক্যাব) সংশ্লিষ্টদের।
গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়। তখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৭৫ টাকা, যা আগে ছিল ১৬৭ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান দেশে ভোজ্যতেল আমদানি ও পরিশোধন করে বিপণন করছে। এর মধ্যে প্রথম সারিতে আছে সিটি গ্রম্নপসহ চার থেকে পাঁচটি গ্রম্নপ। ঋণের দায়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সীমিত করেছে শীর্ষ স্থানীয় আমদানিকারক এস আলম। এই সুযোগে কয়েকটি গ্রম্নপ বাজারে রাজত্ব করছে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্যে দেখা গেছে, রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে প্রায় ৩ লাখ টন। এর বিপরীতে গত এক মাসে প্রায় ৪ লাখ টন সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানি হওয়ার কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। একই সময়ে সয়াবিন তেল তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টন। এই হিসাবে চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ বেশি থাকার কথা। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সরকার আমদানি বাড়াতে ও দাম কমাতে ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করলেও বাজারে দেখা যাচ্ছে উল্টো গতি।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, 'হঠাৎ করেই বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ না থাকার অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এ কারণে দামও বেড়েছে।'
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন মোকাম ঘুরে ভোজ্যতেলের তেমন দেখা মেলেনি। কিছু দোকানে সামান্য কিছু বোতলজাত সয়াবিন দেখা গেলেও দাম চড়া। কয়েক দিনের মধ্যে সেগুলোও শেষ হওয়ার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা।
তাদের অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরে করপোরেট গ্রম্নপগুলো বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। সংকটকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ইচ্ছামতো। দাম বেড়ে বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৯০ টাকার ওপরে। যদিও কয়েক দিন আগেও একই তেল বিক্রি করা হয় ১৮৫ টাকায়। পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৬৬ থেকে ১৬৮ টাকা। কয়েক দিন আগে এটির দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৬২ টাকা। কিছু দোকানে পাঁচ লিটারের বোতলের গায়ে ৮৫২ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকায়।
রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর দবিরুল ইসলাম দিদার বলেন, 'আমরা চাহিদামতো তেল বাজারে সরবরাহ করছি। স্বাভাবিক সময়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টন ভোজ্যতেল সরবরাহ করলেও গত এক মাসে করেছি প্রায় ১৪ হাজার টন।'
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মো. জুলফিকার বলেন, 'কৃত্রিম সংকট তৈরি করতেই কারসাজি করে বাজারে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না।'