বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অনেক ভালো ভালো কথা বললেও রাষ্ট্র সম্পর্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কোনো পলিটিক্যাল ফিলোসফি (রাজনৈতিক দর্শন) তিনি পাননি।
শনিবার রাজধানীতে 'গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ত্যাগ ও নেতৃত্ব' শীর্ষক আলোচনা সভা ও 'নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ইনস্টিটিউশন অব ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) এর মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এনআরএফ) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রিজভী বলেন, 'আজ দুই-একজন বুদ্ধিজীবী বলেন ক্ষমতায় থেকেই তো বিএনপির জন্ম হয়েছে। ওনারা ভুলে গেছেন, ওনারা রাজনীতিতে একটা নতুন ন্যারেটিভ তৈরি করছেন। এরশাদ, জিয়াউর রহমান
নিয়ে আসতে চাচ্ছে, কিন্তু এইটা যে ঠিক নয়, জিয়া যে অন্য মাত্রার, অন্যকিছু, জিয়া একটি নতুন দর্শন দিয়েছেন। আজ অনেকে দল করছেন, আমি গতকাল নতুন যারা দল করেছেন তাদের ওখানে উপস্থিত ছিলাম, তারা অনেক ভালো ভালো কথা বলেছেন রাষ্ট্র সম্পর্কে, কিন্তু পলিটিক্যাল ফিলোসফি কিন্তু আমি পাইনি।'
জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন ব্যবস্থা হত্যা করে বহুদলীয় গণতন্ত্রে উত্তরণ করেছেন উলেস্নখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, 'এইটা যে কোনো একজন গণতান্ত্রিক মানুষকে করতে হতো, এটা জিয়াউর রহমান করেছেন। জিয়াউর রহমান কোনো গণতান্ত্রিক শাসক উৎখাত করে ক্ষমতায় আসেননি। গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে শেখ মুজিব বাকশাল করে। সেখানে বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্ম দিয়েছেন জিয়াউর রহমান।'
তিনি আরও বলেন, 'এতগুলা টেলিভিশন, আমরা যে খবরের কাগজ পড়ছি, গণতন্ত্রে বহুমতের যে একটা জায়গা আছে, সহিষ্ণুতার যে জায়গা আছে, এটা কে সৃষ্টি করেছে? বাকশালের অন্ধকার গুহা থেকে গণতন্ত্রের আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। যেসব বুদ্ধিজীবী বলেন, বিএনপিও তো ক্ষমতায় থেকে তৈরি, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে তৈরি বা বিএনপির জন্মের সঙ্গে অন্য দলের জন্মের হাজার পার্থক্য আছে। কারণ বিএনপি এমন একটি আলোচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করেছেন বলেই আবার যখন গণতন্ত্র সংকটের মুখে পড়েছে বেগম খালেদা জিয়া আবার গণতন্ত্রের মশাল জ্বালিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিজয় করেছিলেন ৯০ দশকে। ২০০৬ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত যে প্রেরণায় আমরা জেল খেটেছি, দিনের পর দিন রিমান্ডে গেছি, আমাদের সালাহউদ্দিন আহমেদ (স্থায়ী কমিটির সদস্য) দুই মাস অন্ধকার কুঠুরিতে থেকেছেন, যেখানে দিন না রাত বোঝা যায় না, এত যে নির্যাতন এটা কার প্রেরণায়? এটা বেগম খালেদা জিয়ার প্রেরণায়।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. আনোরুলস্নাহ চৌধরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহম্মেদ, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিশিষ্ট রসায়ন বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. তাজমেরী এস এ ইসলাম, ছাত্র সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন রুনু, ভারপ্রাপ্ত চেয়্যারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসিম, সহ-স্বেচ্ছা সেবক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।
হাসিনার প্রেতাত্মাদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন নির্বাচন
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রেতাত্মাদের ষড়যন্ত্র থেকে পেতে চাইলে এ মুহূর্তে প্রয়োজন একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মধ্যদিয়েই দেশের অভ্যন্তরীণ সব সমস্যার সমাধান হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি এবং সারাদেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রতিবাদে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, 'স্থানীয় নির্বাচনের বৃহত্তর সমস্যাগুলো, গত ১৬ বছরের সমস্যাগুলো কয়েকদিনে শেষ করতে পারবে না। তাই সংস্কার যেটুকু দরকার শুধু তাই করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।'
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, 'বাংলাদেশ একটি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। তাদের আমরা দেখেছি জুলাই বিপস্নবের রাজপথে থেকে ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে সহযোগিতা করেছে। আমরা তাদের জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে জাগপার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।'
তিনি বলেন, 'আমাদের মনে রাখতে হবে দেশের তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিতে তারেক রহমান যেভাবে উৎসাহ দিয়ে এসেছেন সেখানে কিন্তু সব সমস্যার সমাধান নিহিত আছে। আমরা নতুন দলকে স্বাগত জানাই কারণ তারা গণতন্ত্রের স্বপক্ষে যেভাবে হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, যেভাবে রক্ত দিয়ে দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন তা অত্যন্ত গৌরবের। আজ সেই অধিকার ক্ষুণ্ন করার জন্য আবারও ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে নির্বাচনের বিকল্প নেই।'
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এবং জাগপার সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রিয়াজের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নেতারাসহ জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও দলীয় নেতারা।