রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্বকাপের আগে নারী দলের হতশ্রী পারফরম্যান্স চিন্তার কারণ

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০
বিশ্বকাপের আগে নারী দলের হতশ্রী পারফরম্যান্স চিন্তার কারণ
ক্রিকেটে টানা ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ নারী দল -সংগৃহীত

ঘরের মাঠে বাংলাদেশ নারী দলের এ কেমন বিপর্যয়! ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা ১১ ম্যাচ খেলে সবগুলোতে হারল নিগার সুলতানার দল। অথচ ঠিক আগের বছরই নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে ভক্তদের মন কেড়েছেন নিগাররা। তবে হুট করে কী হয়ে গেল এই দলটার?

চলতি বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে নারীদের টি২০ বিশ্বকাপ। তার আগে নারীদের হতশ্রী পারফরম্যান্স চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্তির বিচারে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে থাকলেও চেনা কন্ডিশনে অন্তত লড়াইটা আশা করাই যায় টাইগ্রেসদের কাছ থেকে। তবে টানা ১১ ম্যাচের কোনোটাতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাজে হারে বিশ্বকাপের আগে সমালোচনার মুখে নিগারের দল।

1

তবে নারী দলের এই বিপর্যয়টা একদিনেই হয়নি। বছরের পর বছর ধরেই বাংলাদেশ নারী দলের এমন অবস্থা। শুধু স্পোর্টিং পিচ এবং বড় দলের বিপক্ষে পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়ায় এই চিত্রটা আগে ধরা পড়েনি। নারী দলের এমন বিপর্যয়ের পেছনে কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

সুযোগ-সুবিধার অনেক অভাব থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ নারী দল দেশকে অনেক আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছে। পুরুষ ক্রিকেট দল যেখানে ২৪-২৫ বছরে একটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে পারেনি, সেখানে নারী ক্রিকেট দল অনেকটাই এগিয়ে। ২০১৮ সালে ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতেছে টাইগ্রেসরা। এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জয়, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে এবং টি২০ জয়সহ দারুণ কিছু অল্প সময়েই ছুঁয়ে ফেলেছে নারীরা। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন বাস্তবতা কেবলই দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশ নারী দল। প্রত্যাশা যখনই ভর করতে শুরু করেছে নিগারদের ওপর তখনই খাবি খেতে শুরু করেছে তারা। এর অন্যতম বড় কারণ হতে পারে বড় শট খেলার দক্ষতার অভাব।

ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের নারী এবং পুরুষদের শারীরিক গঠন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকানদের মতো নয়। বড় শট খেলার ক্ষেত্রে যে সক্ষমতা দরকার পুরুষ দলের মতো নারীদের ক্ষেত্রেও সেটার যথেষ্ট অভাব লক্ষ্য করা যায়। ২০২৩ সাল থেকেই যদি ধরা হয়। গত বছরের শুরু থেকে ভারত সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ পর্যন্ত বাংলাদেশ ২৪টি টি২০ খেলে প্রতি ওভারে তুলেছে গড়ে ৫.৪১ রান। এ সময়ে কমপক্ষে ১০টি ম্যাচ খেলেছে, এমন দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৬ নম্বরে। এখানে তাদের ওপরে আছে এবারই প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলতে আসা ভানুয়াতুর মতো দলও। টি২০তে রান তুলতে বাউন্ডারি বড় একটা পার্থক্য গড়ে। ২০২৩ সালের শুরু থেকে ভারত সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছক্কা মেরেছে ১৭টি, আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে তাদের চেয়ে পিছিয়ে শুধু নিউজিল্যান্ড। মেয়েদের ক্রিকেটে ছক্কার সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই পুরুষদের তুলনায় কম। কিন্তু সেদিক থেকেও অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। ২০২৩ সাল থেকে চলতি বছরের ৬ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ চার মেরেছে ২০৪টি, যা আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। শীর্ষে থাকা অস্ট্রেলিয়া এক ম্যাচ কম খেলেই মেরেছে ৪০৪টি চার। ২৫ ম্যাচে ভারত মেরেছে ৩২৭টি চার।

ব্যাটারদের গড় স্ট্রাইক রেটেও বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাটারদের গড় স্ট্রাইক রেট মাত্র ৮২.০৭। কয়েকদিন আগে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলা শ্রীলংকা-আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররাও যেখানে এ সময়ে ১০০-এর ওপর গড় স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন, সেখানে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারেরই ৯০ এর ওপর স্ট্রাইক রেট নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নারী দলের যত সাফল্য এসেছে তার সবগুলোর সঙ্গেই কমবেশি জড়িয়ে আছে অধিনায়ক নিগার সুলতানার নাম। ব্যাট হাতে তিনি ছাড়া তেমন কেউই দলের দায়িত্ব নিতে পারছেন না। সর্বশেষ দুই বছরে টি২০ ক্রিকেটে ৫টি ফিফটি করেছে বাংলাদেশ নারী দল। এর মধ্যে চারটিই এসেছে তার ব্যাট থেকে। বাকি একটি এসেছে মুর্শিদা খাতুনের ব্যাট থেকে। দলের অবস্থাটা এখন এমন যে নিগার পারফর্ম না করলে ভালো একটা সংগ্রহই দাঁড় করাতে পারছে না বাংলাদেশ। ফলে বোলারদের জন্য আর লড়াইয়ের তেমন রসদ থাকে না।

স্পিন উইকেটে অল্প রান তাড়া বা ডিফেন্ড করে জেতাই নারী দলের মূল স্ট্র্যাটেডি হয়ে উঠেছে। কিন্তু স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে গিয়ে এই কৌশল আর কাজে আসছে না টাইগ্রেসদের। তাই বারবারই খাবি খাচ্ছে দল।

পুরুষ ক্রিকেটের মতো নারী ক্রিকেটেও অন্যতম পরাশক্তি ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। তবে এসব বড় দলের বিপক্ষে তেমন ম্যাচ খেলার সুযোগ পান না বাংলাদেশের নারীরা। আইসিসির পূর্ণ সদস্য হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত একবারও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজে খেলার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের। মিরপুরে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে টাইগ্রেসদের প্রথম এবং একমাত্র সিরিজ। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলও তেমন একটা সিরিজ খেলতে আগ্রহী নয় বাংলাদেশের বিপক্ষে। বড় দলের বিপক্ষে যথেষ্ট ম্যাচ না খেলার অভিজ্ঞতা অনেকাংশে পিছিয়ে দিচ্ছে নারী দলকে।

স্বাভাবিকভাবেই খেলোয়াড়দের শারীরিক গঠন, বেড়ে ওঠার সঙ্গে টি২০'র পাওয়ার ব্যাটিংয়ের একটা সম্পর্ক আছে। সেক্ষেত্রে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন নারী ক্রিকেটারদের। পুরুষ ক্রিকেটের পাইপলাইন নিয়ে যতটা চিন্তা করা হয় তার সিকিভাগও নজর দেওয়া হয় না নারী ক্রিকেটে। সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও নারীরা অনেক পিছিয়ে। এসব সমস্যা সমাধান না হলে নারী ক্রিকেটে উন্নতি করা কঠিন হয়ে পড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে