দেশের জনপ্রিয় অভিনেতাদের একজন খলিল উলস্নাহ খান। পুরো নাম আবুল ফজল মোহাম্মদ খলিল উলস্নাহ খান। চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি টেলিভিশন নাটকেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। খলিল ১৯৩৪ সালের ১ ফেব্রম্নরুয়ারি ভারতের মেদিনীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পুলিশ অফিসার ছিলেন বলে তাকে সিলেট, কৃষ্ণনগর, বগুড়া, বর্ধমান ও নোয়াখালী যেতে হয়। খলিলের শৈশব জীবন কেটেছিল এসব জেলাতেই। ১৯৪৮ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫১ সালে মদনমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তী কালে সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫১ সালে আর্মি কমিশনে যোগ দিয়ে কোয়েটাতে চলে যান। ১৯৫২ সালে ফিরে এসে আনসার এডজুট্যান্ট হিসেবে যোগ দেন। দীর্ঘদিন সাসপেন্ড থাকার পর তা উইড্র হয় ১৯৭৭ সালে। ১৯৯২ সালে আনসার থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৫৯ সালে সোনার কাজল ছবিতে প্রথম অভিনয় শুরু করেন। চলচ্চিত্রে আসার পূর্বে বেশ কয়েকটি নাটকেও অভিনয় করেন তিনি। চলচ্চিত্রে আসার ব্যাপারে প্রযোজক মাসুদ চৌধুরীর কাছ থেকে সহযোগিতা পান তিনি। তার সহযোগিতায় জহির রায়হানের 'সোনার কাজল' ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। প্রথম ছবিতে দুজন নায়িকা ছিলেন- একজন সুমিতা দেবী, অপরজন সুলতানা জামান। জহির রায়হান ছাড়াও সোনার কাজল ছবিটির পরিচালক ছিলেন কলিম শরাফি। খলিল অভিনীত দ্বিতীয় ছবি 'প্রীত না জানে রীত'। ছবিটি ১৯৬৩ সালের ১৩ জানুয়ারি মুক্তি পায়। খলিলের তৃতীয় ছবি 'সংগম'। এ ছবিতে খলিল ও সুমিতা দেবী রোমান্টিক নায়ক-নায়িকা হিসেবে আবির্ভূত হন। এরপর নায়ক হিসেবে তিনি একে একে অভিনয় করেন সোনার কাজল (১৯৫৯ ), ক্যায়সে কঁহু (১৯৬৫), ভাওয়াল সন্ন্যাসী (১৯৬৫), বেগানা (১৯৬৬), জংলী ফুল (১৯৬৮) প্রভৃতি ছবিতে। নায়ক হিসেবে খলিলের শেষ ছবি 'জংলী ফুল'। এটি ১৯৬৮ সালের ২৯ মার্চ মুক্তি পায়। তার নায়িকা ছিলেন সুলতানা জামান। সহ-নায়িকা ছিলেন সুচন্দা। ১৯৭৪ সালে 'উৎসর্গ' এবং 'এখানে আকাশ নীল' ছবি ২টির মাধ্যমে খলিল চরিত্রাভিনেতারূপে আত্মপ্রকাশ করেন। এস এম পারভেজ পরিচালিত বেগানা ছবিতে প্রথম খলনায়ক হিসেবে খলিল অভিনয় করেন। দুটি ছবি প্রযোজনা করেছিলেন তিনি। একটি সিপাহি অন্যটি এই ঘর এই সংসার। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৫ সালে চুক্তিবদ্ধ হন 'ভাওয়াল সন্ন্যাসী' ছবিতে। ভাওয়াল রাজার ঐতিহাসিক কাহিনী অবলম্বনে এর চিত্রনাট্য লিখেছিলেন রওনক চৌধুরী। তিনিই ছিলেন ছবির পরিচালক। ছবিতে ডাক্তার আশুর চরিত্রে ছিলেন খলিল। ছবিতে নায়িকা অর্থাৎ রানিরূপী রেশমার সঙ্গে ছিল তার পরকীয়া প্রেম। ভাওয়াল সন্ন্যাসীর পর 'উলঝন' ছবিতে খলিলের নায়িকা ছিলেন রোজী। ১৯৬৬ সালে 'বালা' নামে একটি উর্দু ছবিতে অভিনয় করার অফার পেলেন তিনি। এই ছবিতে জেনিফার নামে একজন অভিনেত্রীকে জড়িয়ে সমালোচিত হওয়ার পর খলিল 'বালা' ছবির কাজ ছেড়ে দেন। আশির দশকে টেলিভিশন পর্দায় আসেন খলিল। তার অভিনীত বিশেষ নাটকের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে- আব্দুলস্নাহ আল মামুনের ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তক।
তার অভিনীত অন্যান্য ছবির মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- সমাপ্তি, তানসেন, নদের চাঁদ, পাগলা রাজা, বেঈমান, অলঙ্কার, মিন্টু আমার নাম, ফকির মজনু শাহ, কন্যাবদল, মেঘের পরে মেঘ, আয়না, মধুমতি, ওয়াদা, ভাই ভাই, বিনি সুতার মালা, সঙ্গম, সোনার কাজল, আলোর মিছিল, অশান্ত ঢেউ, কাজল, জংলী ফুল, বেগানা, সমাপ্তি, তানসেন, গুন্ডা, পুনর্মিলন, বউ কথা কও, আওয়াজ, দ্বীপ কন্যা, সেতু, মনিহার প্রভৃতি।
অভিনয়ের জন্য ২০১২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা। খলিল ১৯৫৪ সালে মানিকগঞ্জের রাবেয়া খানমকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে। খলিল ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে মৃতু্যবরণ করেন তিনি। বাংলা সিনেমায় দারুণ সব অভিনয় দিয়ে মাতিয়ে রাখতেন তিনি। তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেলেন আমৃতু্য।