কর আহরণ না বাড়ালে দেশ বিপদে পড়বে উলেস্নখ করে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছেন, প্রোটেকশনের দিন কিন্তু চলে গেছে। ভ্যাট দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর আয়োজিত সেমিনারে তিনি বলেন, 'ট্যাক্স রেভিনিউ যদি না বাড়াই, আমরা নিজেরাই বিপদে পড়ব।'
তিনি বলেন, 'আমরা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যখন কথা বলি, তারা বলে, তোমাদের এত লোক কিন্তু ভ্যাট এত কম, অব্যাহতি দিচ্ছ। আরেকটা জিনিস, ব্যবসায়ীরা আছেন, ব্যবসা করার জন্য। আমাদের একটু অব্যাহতি দেন। আর আর্গুমেন্ট তো আছেই। শিশুকে লালনপালন করা।'
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন খাতে কর কমিয়ে ও প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করার বিষয়টি সামনে এনে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা পঞ্চাশ বছর ধরে বহু শিশুকে লালন করেছি, ট্যাক্স অব্যাহতি দিয়ে, ইনিসেনটিভ দিয়ে। আর কতকাল শিশুকে লালন করব?
তিনি বলেন, 'আমি উদাহরণ দিলাম না, আপনারা অনেকেই বুঝতে পারেন যে যেসব শিশু এখনো শিশুই রয়ে গেছে। শারীরিক দিক থেকে বড় হয়ে গেছে, কিন্তু তারা নিজেদের বলে এখনো প্রোটেকশন দিতে। এই প্রোটেকশনের দিন কিন্তু চলে গেছে।'
২০২৬ সালে এসে উন্নয়শীল দেশে উত্তরণ হওয়ার জন্য এসব থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, 'সব কিছু মাথায় রেখেই সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা ট্যাক্স দেবেন।'
কর্মকর্তাদের করদাতাদের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের কর্মকর্তারা, তারাও একটু একটু ফ্রেন্ডলি হবেন। মানে জোর করে একেবারে আদায় করে নিয়ে আসবেন না। যদি অসুবিধা হয় শুনবেন, তাদের যথাসম্ভব কমপস্নায়েন্স করে তাদের একটু সহায়তা করা।'
সেমিনারে অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, 'আমাদের কর জিডিপি অনেক কম। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের থেকে অনেক কম। এ নিয়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে সব সময়ই কথা শুনতে হয়। আশা করি, এ বিষয়ে এনবিআর ব্যাপক কাজ করবে।'
তিনি বলেন, 'বাজেট ডেফিসিট আমরা পূরণ করি ঋণ নিয়ে। রেভিনিউ কমে গেলে ঋণ বেড়ে যাবে। আমরা ঋণে জর্জরিত হয়ে যাব। এজন্য অনেক সময় আয় দেখে ব্যয় কমাই। কিন্তু এতে উন্নয়ন কাজ কমে যায়। আমাদের গ্রোথ ধরে রাখতে রেভিনিউ বাড়াতে হবে।'
এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা ভ্যাট সংগ্রহের কাজটি যতটা সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে করবে, রাজস্ব আদায় তত গতিশীল হবে। আমরা যারা কেনাকাটা করি, তাদের মধ্যে ভ্যাট দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। ভ্যাটের পরিমাণ না বাড়িয়ে এর ক্ষেত্র বাড়ানো যায় কি না, তিনি সেটি দেখার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, এই রেট বাড়তির কারণে ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা দেখা দেয়। এটা কমালে ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করে তুলবে।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেন, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জই হলো ট্যাক্স রেভিনিউ কিভাবে বাড়াব। নানা কারণেই শুল্ক বাড়ানো যাবে না। আমাদের মূল সোর্স হচ্ছে ভিএটি এবং আয়কর।
তিনি বলেন, 'ব্যবসায়ীরা হচ্ছে এক্ষেত্রে কালেক্টিং এজেন্ট। ভ্যাট আদায় করা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু আমরা এক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতি দেখছি।'
তিনি বলেন, 'আমি আবারও বলছি, ব্যবসায়ীরা ভ্যাট পেয়ার না, ভ্যাট দেবেন ক্রেতারা। তারা কেবল সরকারের পক্ষে ভ্যাট কালেক্টিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে অনেক কাজের সুযোগ আছে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরাও একই কথা বলেন যে, আমাদের ভ্যাট আদায় বাড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। আমাদের রেজিস্টার্ড ভিএটি পেয়ার ৪-৫ গুণ বাড়ানোর সুযোগ রিয়েছে। এখন ৫ লাখের বেশি আছে, আমি তো মনে করি, এটি ২০-২৫ লাখ করা সম্ভব।'