ফেব্রম্নয়ারি মাসে পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্সের (পিএমআই) মান ৬৪ দশমিক ৬, যা আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ১ পয়েন্ট কম। তবে পয়েন্ট কমলেও সম্প্রসারণের ধারায় রয়েছে দেশের অর্থনীতি। টানা পাঁচ মাস অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি এ ধারায় চলছে। যদিও গত জানুয়ারিতে আগের মাসের তুলনায় পিএমআই মান ৪ পয়েন্ট বেড়েছিল। ফেব্রম্নয়ারিতে এসে তা ১ দশমিক ১ পয়েন্ট কমে গেছে। মূলত কৃষি ও উৎপাদন খাতের সম্প্রসারণের গতি বাড়লেও নির্মাণ এবং সেবা খাতের সম্প্রসারণের গতি কমেছে বলে দাবি করছেন পিএমআই-সংশ্লিষ্টরা।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ (পিইবি) যৌথভাবে গতকাল ফেব্রম্নয়ারির পিএমআই প্রকাশ করেছে। এক বছর ধরে প্রতিষ্ঠান দুটি প্রতি মাসেই এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।
দেশের অর্থনীতির প্রধান চারটি খাত কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা খাতের ওপর জরিপ চালিয়ে তৈরি করা এ প্রতিবেদনের মান ১০০-এর মধ্যে নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে পিএমআই মান ৫০-এর নিচে হলে দেশের অর্থনীতি সংকোচন ও ৫০-এর বেশি হলে সম্প্রসারণের ধারায় রয়েছে বলে বোঝানো হয়। আর মান ৫০ থাকলে বুঝতে হবে সংশ্লিষ্ট খাতে ওই মাসে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফেব্রম্নয়ারির পিএমআই প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষি ও উৎপাদন খাতের পিএমআই আগের মাসের তুলনায় যথাক্রমে ৭ দশমিক ৮ ও ৪ দশমিক ১ পয়েন্ট বেড়ে যথাক্রমে ৬৬ দশমিক ৪ ও ৭২ দশমিক ৬-এ দাঁড়িয়েছে, যা জানুয়ারিতে ছিল ৫৮ দশমিক ৬ ও ৬৮ দশমিক ৫ পয়েন্ট।
কৃষি খাত টানা পাঁচ মাস সম্প্রসারণ বজায় রেখেছে এবং দ্রম্নত সম্প্রসারণ হার প্রদর্শন করেছে। নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম, ইনপুট খরচ ও অর্ডার ব্যাকলগ সূচকের দ্রম্নত সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে। কর্মসংস্থান সূচক ধীর সংকোচনের হার প্রকাশ করেছে।
উৎপাদন খাত টানা ছয় মাস সম্প্রসারণ বজায় রেখেছে এবং দ্রম্নত সম্প্রসারণ হার প্রকাশ করেছে। নতুন অর্ডার, কারখানার উৎপাদন, ইনপুট ক্রয় ও সরবরাহকারী ডেলিভারি সূচকের দ্রম্নত সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে। তবে নতুন রফতানি, সমাপ্ত পণ্য, আমদানি এবং কর্মসংস্থান সূচকের ধীর সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে। অর্ডার ব্যাকলগ সূচক দ্রম্নত সংকোচনের হার প্রদর্শন করেছে।
কৃষি ও উৎপাদন খাতের পিএমআই বাড়লেও কমেছে নির্মাণ ও সেবা খাতের। নির্মাণ খাতে আগের মাসের পিএমআই মান ৬৩ থেকে ৩ দশমিক ৪ পয়েন্ট কমে ৫৯ দশমিক ৬-এ গিয়ে ঠেকেছে। আর সেবা খাতে কমেছে ৫ পয়েন্ট। এ খাতের জানুয়ারির পিএমআই ছিল ৬৬ দশমিক ৩, যা ফেব্রম্নয়ারিতে ৬১ দশমিক ৩-এ গিয়ে ঠেকেছে।
নির্মাণ খাত টানা তিন মাস সম্প্রসারণ বজায় রেখেছে, তবে ধীরগতিতে। নতুন ব্যবসা ও নির্মাণ কার্যক্রম সূচক ধীর সম্প্রসারণ রেকর্ড করেছে, যেখানে ইনপুট খরচ সূচকের দ্রম্নত সম্প্রসারণ দেখা গেছে। কর্মসংস্থান সূচক সম্প্রসারণে ফিরে এসেছে এবং অর্ডার ব্যাকলগ সূচক ধীর সংকোচনের হার প্রকাশ করেছে। সেবা খাত টানা পাঁচ মাস সম্প্রসারণ বজায় রেখেছে, তবে ধীরগতিতে। নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং কর্মসংস্থান সূচকের ধীর সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে। অর্ডার ব্যাকলগ সূচক সংকোচনে ফিরে এসেছে এবং ইনপুট খরচ সূচকের দ্রম্নত সম্প্রসারণ দেখা গেছে। কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবাসহ সব প্রধান খাতে ভবিষ্যৎ ব্যবসা সূচকের ধীর সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে।
ফেব্রম্নয়ারির পিএমআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পিএমআই সূচক টানা পাঁচ মাস স্থায়ী সম্প্রসারণ নির্দেশ করে, যা রফতানি বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ও কৃষিতে মৌসুমি প্রবৃদ্ধি দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। তবে নির্মাণ ও সেবা খাতে ধীর সম্প্রসারণ দেখা গেছে। দুর্বল চাহিদা, জ্বালানি বিভ্রাট এবং চলমান বিক্ষোভের কারণে ব্যবসায়িক আস্থা এখনো আগের মতোই কম থেকে গেছে। আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও অগ্রাধিকারমূলক সংস্কার দ্রম্নত বাস্তবায়নের ওপরই অর্থনীতির টেকসই পুনরুদ্ধার নির্ভর করছে।