বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

মার্চে পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে তেল আসবে ঢাকায়

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মার্চে পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে তেল আসবে ঢাকায়
মার্চে পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে তেল আসবে ঢাকায়

পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পরিবহণে নেওয়া প্রকল্পের কাজ চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। আগামী মার্চে নতুন এই পাইপলাইন দিয়ে তেল পরিবহণের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। পাইপে পরিবহণ শুরু হলে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে জ্বালানি তেল পরিবহণ খরচ কমবে। নির্বিঘ্ন হবে সরবরাহব্যবস্থাও। পরিবেশ দূষণও রোধ করা সম্ভব হবে। পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে সরবরাহ করা হবে ২৭ লাখ টন ডিজেল। বর্তমানে ২১ দশমিক ৪০ লাখ টনের চাহিদা রয়েছে।

প্রকল্পের নথিপত্র অনুযায়ী, ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। শুরুতে এটির মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। এরপর প্রথম দফায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ আবার বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ হয়। শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়। বিপিসির এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

প্রকল্পের কাজ দেরিতে শুরু হওয়ার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মূল কাজ শুরু হওয়ার পর প্রকল্পে কিছু পরিবর্তন এসেছে। এসব পরিবর্তন সংযোজন করে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালে। এরপর ওই বছর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু আবার করোনা মহামারির কারণে প্রায় এক বছর কাজ বন্ধ ছিল। ফলে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে চার বছর লাগল। ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে এই প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পের ৯০ শতাংশ সরঞ্জাম ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। ডলার ও সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।

নথিপত্র অনুযায়ী, পাইপলাইনের দুটি অংশ রয়েছে। একটি অংশ চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিলস্না, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশটি গোদনাইল থেকে ফতুলস্না পর্যন্ত। পাইপলাইন ছাড়াও প্রকল্পের আওতায় বুস্টার পাম্প, ৯টি জেনারেটরসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে।

বিনিয়োগ উঠবে ১৬ বছরে

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে ৬৫ লাখ টন। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরবরাহ করা হয়েছে ৬৭ লাখ টন। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই ডিজেল। ঢাকা বিভাগেই জ্বালানি তেলের ব্যবহার মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ। বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহণের জন্য প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুলস্না ডিপোতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় তেল পরিবহণ করা হয়। পরিবহণে ব্যবহৃত হয় প্রতি মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ। এতে বছরে ২০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।

প্রকল্পের নথিতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর প্রকল্প থেকে ৩২৬ কোটি টাকা আয় হবে। পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, ফুয়েল, বিদু্যৎ বিল, জমির ভাড়াসহ আরও কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। তাতে প্রতি বছর সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। বিনিয়োগ উঠে আসবে ১৬ বছরের মধ্যে।

জানতে চাইলে বিপিসি মনোনীত প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক বলেন, প্রকল্পের নির্মাণকাজ ডিসেম্বরেই পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। এরপর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম (কমিশনিং) শেষে পুরোদমে জ্বালানি সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হবে।

তবে মার্চের মধ্যেই পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহণ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিচালন) অনুপম বড়ুয়া। তিনি বলেন, জানুয়ারিতে প্রকল্পটির কমিশনিং হবে। এরপর জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে। মার্চে শুরু হবে জ্বালানি তেল পরিবহণ। এই প্রকল্প শেষে অর্থ ও সময় দুই-ই সাশ্রয় হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে