মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

বর্ধিত ভ্যাট-শুল্কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষক

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বর্ধিত ভ্যাট-শুল্কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষক
বর্ধিত ভ্যাট-শুল্কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষক

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক আরোপে দাম বেড়ে গেলে পণ্য কেনা কমিয়ে দেবেন ভোক্তারা। স্বাভাবিকভাবে কোম্পানিগুলোও কাঁচামাল হিসেবে কৃষিপণ্য সংগ্রহ কমিয়ে দেবে। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা। তারা ফসলের ভালো দাম পাবেন না।

বুধবার রাজধানীর গুলশানের পুলিশ পস্নাজায় এমসিসিআই কনফারেন্স হলে আয়োজিত 'ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি এম এ হাশেম।

তিনি বলেন, কর বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাকেও বেশি দামে খাবার কিনতে হবে। কম দামে বিস্কুট, কেকসহ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য মিলবে না। কৃষকের মতো সাধারণ মানুষও ভুগবে। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের শ্রমজীবী, প্রান্তিক কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সরকারকে এটা চিন্তা করতে হবে।

বাপার সভাপতি বলেন, বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে প্রক্রিয়াজাত কৃষিখাত খুব বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে এসব খাবার গেলে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা এমনিতেই বড় সমস্যায় আছি বেশ কয়েক বছর ধরে। আমাদের ১৬ শতাংশ ব্যাংকের সুদহার, দিনে আট ঘণ্টা বিদু্যৎ থাকছে না, গ্যাস থাকে না। কীভাবে টিকে থাকবো সে লড়াইয়ে অনেকে ব্যস্ত। বাড়িঘর বন্ধক দিয়ে ঋণ নিয়ে আমরা ব্যবসা করছি, তারপরও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হই, সেটা কাম্য নয়।

এম এ হাশেম বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশে শুল্ককর বাড়ানোর আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা হয়। আমাদের দেশে সেটা হয়নি। বিগত সরকারও করেনি, এ সরকারও করেনি। আমাদের জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজন মনে করে না। যখন খুশি তখন ট্যাক্স বাড়িয়ে দেবেন, কোন দেশে বাস করছি আমরা? সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যবসায়ী সমাজেরও প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি রয়েছে। আমাদের আরও শক্তভাবে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গণমাধ্যম থেকে শুনেছিলাম প্রতি রাতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেড় কোটি টাকা চাঁদা পেতেন। এখন তো পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু চাঁদাবাজির কি পরিবর্তন হয়েছে? এখনো যাত্রাবাড়ীসহ অন্য বাজারে চাঁদাবাজি হচ্ছে, কারা করছে, এটা বন্ধ করতে হবে। এটা বন্ধ না হলে মূল্যস্ফীতি কমবে না, কারণ পণ্যের দাম বাড়তি থাকবে।

পরিবহনের চাঁদাবাজিও বন্ধ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানিমুখী শিল্পের পণ্যের গাড়ি শরীফ মেলামাইন কাঁচপুর ব্রিজ নারায়ণগঞ্জের কয়েকটির পয়েন্টে আটকানো হয়। সেখানে হয়রানি করা হচ্ছে রপ্তানিকারকদের। এ পয়েন্টগুলোয় গাড়ি আটকে এলসির কপি, ইউডির কপি চাওয়া হচ্ছে অথচ সেগুলো সব সময় নিয়ে যাওয়া কি সম্ভব। এরপরই জরিমানা করা হচ্ছে, যার কোনো কারণ নেই। এভাবে অন্যায়ভাবে হয়রানি বন্ধ করা হোক। এ কারণে শিপমেন্ট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অনেক ব্যবসায়ী সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানালেন আমি কথা বলি, সমাধানও হয়। সেটা কয়জনের সমাধান হবে, গতকালও ৩৯টি কোম্পানির গাড়ি আটকানো হয়েছিল হয়তো পাঁচ-ছয়জনেরটা ছাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এই হয়রানি বন্ধ করা হোক।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য জিরো ভ্যাট বলা হলেও নানান অজুহাতে ভ্যাট বসানো হয়। হঠাৎ এক ব্যবসায়ীর ১১ কোটি টাকার ভ্যাট রেডি করছে কোনো সই ছাড়াই। পরে সেটার নেগুসিয়েশনের জন্য বলা হয়, পরে হয়তো সেটা দু-তিন কোটিতে দাঁড়ায়। রপ্তানির স্বার্থে, দেশের ভ্যাটের নামে হয়রানি চান না ব্যবসায়ীরা।

জাগোনিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ এবং সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ, অর্থনীতিবিদ ড. এম এম আকাশ, প্রাণ-আরএফএল গ্রম্নপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী, রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য রেজাউল হাসান, বিকেএমই সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ, ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, এসিআই ফুডসের চিফ বিজনেস অফিসার ফারিয়া ইয়াসমিন, এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন নাসির, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ও রাজীব চৌধুরী, বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, বাপা সভাপতি এমএ হাশেম, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, সাবেক ব্যাংকার সাইফুল হোসেন ও সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে