বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

মহাকাশে প্রথম নভোচারী পাঠাল ভারত, ঘুচল ৪১ বছরের অপেক্ষা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ জুন ২০২৫, ২০:৫৫
আপডেট  : ২৫ জুন ২০২৫, ২১:০২
মহাকাশে প্রথম নভোচারী পাঠাল ভারত, ঘুচল ৪১ বছরের অপেক্ষা
কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাত্রা শুরু করল এক্সিওম-৪। ছবি: সংগৃহীত

মহাকাশে প্রথম নভোচারী পাঠাল ভারত। ভারতসহ কয়েকটি দেশের নভোচারীদের নিয়ে এক্সিওম-৪ অভিযান মহাকাশে যাত্রা শুরুর পরপরই উৎফুল্ল ভারতীয়রা উল্লাসে ফেটে পড়ে।

কেননা এ অভিযানে পাইলটের দায়িত্বে থাকা গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা যে হতে যাচ্ছেন মহাকাশ ভ্রমণ করা দ্বিতীয় ভারতীয়।

বুধবার ভারতীয় সময় দুপুর ১২টা ১ মিনিটে তাদের মহাকাশযানটি ফ্লোরিডায় অবস্থিত নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে যাত্রা শুরু করে, হিসাব অনুযায়ী বৃহস্পতিবার এটির আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবতরণের কথা।

ঠিকঠাক সব হলে শুক্লা হবেন প্রথম ভারতীয় যিনি কক্ষপথে থাকা নাসার গবেষণাগারটি দেখার সুযোগ পাবেন, লিখেছে বিবিসি।

এর আগে ১৯৮৪ সালে প্রথম ভারতীয় রাকেশ শর্মা রাশিয়ার সয়ুজ যানে চেপে মহাকাশ পাড়ি দিয়েছিলেন।

শুভাংশু শুক্লা যে দলের অংশ হয়ে মহাকাশ যাচ্ছেন, সেটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন নভোচারী পেগি হুইটসন। দুই দফা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করা পেগি ৬৭৫ দিনের বেশি সময় মহাকাশে কাটিয়েছেন, স্পেস ওয়াক (মহাকাশযান বা স্টেশনের বাইরে মহাশূন্যে ভেসে কোনো কাজ) করেছেন ১০ বার।

এক্স-৪ এ চেপে আইএসএসে যাওয়ার এই বাণিজ্যিক ফ্লাইটটি পরিচালনা করছে হিউস্টনভিত্তিক বেসরকারি কোম্পানি এক্সিওম স্পেস, অভিযানটি সম্পন্ন হচ্ছে নাসা, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ) ও স্পেসএক্সের সহায়তায়।

অভিযানে অংশ নেওয়া চারজনের দলে আরও রয়েছে পোল্যান্ডের স্লাভস উজনানস্কি-উইজনিয়েভস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবর কাপু। এই দুই দেশ থেকেও কেউ মহাকাশে যাচ্ছে চার দশক পর।

বুধবার যাত্রা শুরুর আগে কয়েক সপ্তাহ এই নভোচারীদের কোয়ারেন্টিনে কাটাতে হয়েছে।

এই অভিযান ঘিরে ভারতজুড়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। ইসরো বলছে, আইএসএস ভ্রমণে গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুক্লা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যাচ্ছেন তা তাদের মহাকাশ গবেষণায়ও ব্যাপক সহযোগিতা করবে।

ভারত ২০২৭ সালে প্রথমবার মনুষ্যবাহী মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। সেখানে কাকে পাঠানো হবে তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা হয়েছে গত বছর, ওই তালিকায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর যে চার কর্মকর্তা স্থান পেয়েছেন তার মধ্যে ৩৯ বছর বয়সী শুক্লাও আছেন।

ভারতের ২০৩৫ সালের মধ্যে মহাকাশে একটি স্টেশন নির্মাণ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে চাঁদে নভোচারী পাঠানোর মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী সব পরিকল্পনা রয়েছে।

মহাকাশ গবেষণায় কাজ করা ইসরো এরই মধ্যে মহাকাশযাত্রা বিষয়ক অনেকগুলো পরীক্ষানিরীক্ষা করেছে। এক্সিওম-৪ বা এক্স-৪ অভিযানে শুক্লার আসন নিশ্চিত ও তার প্রশিক্ষণবাবদ তারা এরই মধ্যে ৫০০ কোটি রুপিও ব্যয় করেছে।

যাত্রা শুরুর কয়েক মিনিট পর শুক্লা ভারতের জন্য একটি বার্তাও পাঠিয়েছেন।

বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘৪১ বছর পর আমরা মহাকাশে ফিরেছি, এটা এক অসাধারণ যাত্রা। এখন আমরা প্রতি সেকেন্ডে ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটর গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছি। কাঁধে বহন করছি ভারতের পতাকা।

এটা আইএসএসে কেবল আমার যাত্রার শুরু নয়, এটি ভারতের মনুষ্যবাহী মহাকাশ যানেরও শুরু। এই যাত্রার অংশ এবং গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত হতে সব ভারতীয়কে স্বাগত জানাই।’

ফ্যালকন ৯ রকেটের ওপর স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুল শুক্লাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ সরাসরি সম্প্রচার করেছে এক্সিওম স্পেস ও নাসা।

যানটির সফল উৎক্ষেপণের ঘটনায় অভিনন্দন জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “ভারতীয় নভোচারী তার সঙ্গে ১৪০ কোটি ভারতীয়দের শুভেচ্ছা, আশা ও আকাঙ্ক্ষা বহন করছেন।”

শুক্লার বাড়ি যে শহরে লক্ষ্ণৌতে তার বাবা-মা কয়েকশ শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে এক্স-৪ এর উৎক্ষেপণ দেখেছেন। যে স্কুল থেকে তারা এ মহাকাশযানের যাত্রা দেখেছেন সেখানে পৌঁছানোর পর বাদ্য বাজিয়ে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়, আর রকেটের সফল উৎক্ষেপণের পর করতালিমুখর হয়ে ওঠে চারপাশ।

১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর উত্তর ভারতের লক্ষ্ণৌতে জন্ম নেওয়া শুক্লা ২০০৬ সালে ফাইটার পাইলট হিসেবে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যোগ দেন।

প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে তিনি মিগ, সুখোই, ডর্নিয়ার্স, জাগুয়ারস ও হক নিয়ে বাতাসে ভেসেছেন, উড়েছেন দুই হাজারেরও বেশি ঘণ্টা।

কেবল মহাকাশযানের পাইলটের দায়িত্বই নয় শুক্লাকে আইএসএসে দুই সপ্তাহের সময়ে আরও অনেক কিছুই সামলাতে হবে।

এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলা থেকে শুরু করে মহাকাশে ভেসে থাকার সময় ভারতীয় শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়াও আছে।

তবে বেশিরভাগ সময় চারজনের এই দলটি ৬০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেই সময় কাটাবেন, এর মধ্যে সাতটি পাঠানো হয়েছে ভারত থেকে।

ইসরোর এই পরীক্ষাগুলো মহাকাশ এবং প্রাণীজগত ও মাইক্রো-গ্র্যাভিটির ওপর এর প্রভাব সম্বন্ধে বুঝতে সহায়তা করবে, বলেছেন, নাসার সাবেক বিজ্ঞানী মিলা মিত্র।

যে চারজন এক্সিওম-৪ অভিযানে আছেন, তারা। শুভ্রাংশু শুক্লা (বামে), তার সঙ্গী যুক্তরাষ্ট্রের পেগি হুইটসন, পোল্যান্ডের স্লাভস উজনানস্কি-উইজনিয়েভস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবর কাপু। ছবি এক্সিওম স্পেস/বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে