সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২
লোকসানি সরকারি কোম্পানি

একীভূত ও বিলুপ্তির ক্ষমতা পাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রমাগত লোকসান দিতে থাকায়, রাষ্ট্রীয় কিছু কোম্পানি সরকারের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছে। সরকারি অর্থের এভাবে অপচয় ঠেকানোর অসংখ্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি। এই সমস্যার সমাধানেই বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় নতুন একটি আইন প্রণয়ন করছে সরকার। যেখানে ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে অর্থ-মন্ত্রণালয়কে
অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
  ০১ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
একীভূত ও বিলুপ্তির ক্ষমতা পাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়

সরকারি মালিকানাধীন যেকোন প্রতিষ্ঠান বেসরকারিখাতে ছেড়ে দিতে পারবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এছাড়া, সরকারি মালিকানাধীন একাধিক প্রতিষ্ঠান একত্রীকরণ বা বিলুপ্ত করার ক্ষমতাও পেতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এজন্য সরকার নতুন আইন প্রণয়ন করছে বলে মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রমাগত লোকসান দিতে থাকায়, রাষ্ট্রীয় কিছু কোম্পানি সরকারের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছে। সরকারি অর্থের এভাবে অপচয় ঠেকানোর অসংখ্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি। এই সমস্যার সমাধানেই বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় নতুন একটি আইন প্রণয়ন করছে সরকার।

ইতোমধ্যেই 'সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ (ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়) আইন, ২০২৫' শিরোনামে আইন বা অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রথম খসড়া তৈরির পর তার ওপর একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল। তাতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন। সেই ওয়ার্কশপের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রথম খসড়া সংশোধন করে দ্বিতীয় খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে সরকারি মালিকানাধীন কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান্তে যেকোনো সময় এক বা একাধিক নিরপেক্ষ পরিচালক বা অন্য কোন উপযুক্ত পদনামে কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারবে। খসড়া আইনে দুর্নীতি ও ফৌজদারী অপরাধের অভিযোগ বিচারাধীন বা তদন্তনাধীন থাকলে, তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকারি মালিকানাধীন কোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা বলা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আইনটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সব ব্যাংক, তেল-গ্যাস কোম্পানিসহ সরকার মালিকানাধীন সব আর্থিক, অ-আর্থিক, বাণিজ্যিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এই আইনের আওতাভূক্ত হবে না।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন কোম্পানি, করপোরেশন বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথক আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তবে এসব প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ করতে, বিলুপ্ত করতে কিংবা একীভূত করতে পৃথক কোনও আইন নেই। ফলে সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ না বিলুপ্ত করত্তে পৃথকভাবে আইন প্রণয়ন করে সংসদে তা পাস করতে হয়। তাই এবিষয়ে সরকারের আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে, লোকসানি সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।

তবে লোকসানি প্রতিষ্ঠান বিলুপ্তির পক্ষে বিশেষজ্ঞরা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, যেখানে বেসরকারি খাত শক্তিশালী সেখানে লোকসান সৃষ্টিকারী সরকারি উদ্যোগগুলো বিলুপ্তি বা বেসরকারিকরণ করা যেতে পারে। তবে অত্যাবশ্যক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই সরকারের অধীনে রাখতে হবে।

এজন্য সেবাদাতাদের অবশ্যই তাদের পরিষেবার মান উন্নত করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে পরিষেবা ধারণাটি কখনও কার্যকর হয়নি। তাই এধরনের সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে একীভূত করলে সরকারি অর্থের অপচয় হ্রাস পাবে বলেও জানান তিনি।

সরকার বর্তমানে ১৩১টি আর্থিক এবং ৫৬টি অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তদারকি করে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে ১.৩ লাখ ব্যক্তি। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানই অব্যাহতভাবে লোকসান দিচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো ৪.০১ লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে তাদের ব্যয় ৪.৩ লাখ কোটি টাকা হবে বলে প্রক্ষেপণ রয়েছে। যার ফলে তাদের মোট ২৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি লোকসান হবে।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম তদারকির ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। তবে সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধনের দায়িত্ব পালন করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম তদারকি ও তত্ত্বাবধানে একটি স্টিয়ারিং কমিটি কাজ করবে। অর্থবিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে এই কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা থাকবেন। এই কমিটি সরকারি মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারিকরণ, একাধিক সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান একত্রীকরণ বা বিলুপ্তকরণের জন্য সরকারকে সুপারিশ করতে পারবে। স্টিয়ারিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয় যেকোন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারিকরণ, মার্জার বা বিলুপ্তকরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে এতে বলা হয়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হলেও এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনায় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়। তাই যেসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে রয়েছে এবং কোনমতেই লাভজনক করা সম্ভব হবে না, সেগুলো নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্ধ করার এখতিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাতে রেখে এই আইন করা হচ্ছে।

খসড়া আইনটি অর্থ মন্ত্রণালয়কে যেকোনও সময় যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা দেবে। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, সরকারি মালিকানাধীন কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যেকোন সময় অর্থবিভাগ এক বা একাধিক নিরপেক্ষ পরিচালক বা অন্য কোন উপযুক্ত পদনামে কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে