শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

​​​​​​​বিশ্বের দামি সুপার ফুড “কিনোয়া” চাষ হচ্ছে বগুড়ার দুর্গম যমুনা চরে

বগুড়া প্রতিনিধি
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:১০
​​​​​​​বিশ্বের দামি সুপার ফুড “কিনোয়া” চাষ হচ্ছে বগুড়ার দুর্গম যমুনা চরে
​​​​​​​বিশ্বের দামি সুপার ফুড “কিনোয়া” চাষ হচ্ছে বগুড়ার দুর্গম যমুনা চরে

1

বিশ্বের দামি সুপার ফুড গুলোর মধ্যে অন্যতম “কিনোয়া চাষ হচ্ছে বগুড়ার সোনাতলায়। গত বছর স্বল্প পরিসরে দেশের তিন জেলায় লালমনিরহাট, কুরিগ্রাম ও পটুয়াখালিতে চাষ হলেও এবার ব্যাপক পরিসরে বগুড়ায় চাষ করে সারা ফেলেছেন এক সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলছেন দামি এই ফসল চাষে একদিকে লাভবান হওয়া সম্ভব অন্যদিকে, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-ই, পটাসিয়াম এবং ফাইবারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে যোগান দিবে।

সোনাতলা উপজেলার তেকানি চুকাইনগর ইউনিয়নের দুর্গম যমুনার চর ভিকনের পাড়া এলাকায় প্রায় ৭বিঘা জমিতে কিনোয়া চাষ হয়েছে। রবিউল আমিন নামের এক সেনা কর্মকর্তা (মেজর) এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফসলটি তত্বাবধান করেছেন পূর্ব তেকানী এলাকার মোঃ জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন গত ৩ মাস আগে কিনোয়ার বীজ বোনা হয়েছিল এখন পরিপক্ক হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই মাড়াই শুরু করবো। প্রায় ৭বিঘা জমিতে বীজ বপনের পর থেকে মাড়াই পর্যন্ত লক্ষাধীক টাকা খরচ হচ্ছে। তবে ফসল যা ফলেছে তাতে প্রায় ২০ মন কিনোয়া পাবো। ভালো দাম পেলে প্রায় ১২লক্ষ টাকা বিক্রি করা সম্ভব। নতুন এই ফসল বিক্রয় একটু ব্যতিক্রমী হলেও প্রতি কেজি কিনোয়া প্রায় ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি করা সম্ভব।

সেনা কর্মকর্তা (মেজর) মোঃ রবিউর ইসলাম বলেন কিনোয় এই ফসলটি মূলত উত্তর এ্যামেরিকার বলেফিয়া ও পেনু জন্মভুমি হিসেবে পরিচিত। তবে বর্তমানে ওখান থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছরিয়ে পরছে। আমি প্রথমে জানতে পেরে এই ফসল নিয়ে দেশে যিনি গবেষনা করছেন ঢাকা শের-ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ড অব এগ্রোনমির প্রফেসর ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস। তার সাথে যোগাযোগ করি এবং তার কাছে থেকেই বীজ সংগ্রহ করি। তিনি বলেন এই ফসল চরাঞ্চলের বালি মাটিতে ভালো ফলবে সেই অনুযায়িই আমি সোনাতলার এই যমুনা চরকে ডিসাইড করি এবং প্রায় ৭ বিঘা জমি লিজ নিয়ে তাতে কিনোয়ার বীজ বপন করি। বেশ ভালো ফলন হয়েছে আগামিতে সারা দেশে অত্যান্ত উপকারী এই ফসল চাষে সাধারণ কৃষকদের মাঝে ছরিয়ে দিতে আমি সর্বাত্বক চেষ্টা করবো।

ঢাকা শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রোনমির প্রফেসর ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস যায়যায়দিন কে বরেন, ‘কিনোয়া হলো হাই প্রোটিন সম্পন্ন খাবার। এটিকে সুপার ফুডও বলা হয়। কিনোয়ায় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে এবং লাইসিন সমৃদ্ধ, যা সারা শরীর জুড়ে স্বাস্থ্যকর টিস্যু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কিনোয়ায় আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-ই, পটাসিয়াম এবং ফাইবারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। রান্না করা হলে এর দানাগুলো আকারে চারগুণ হয়ে যায় এবং প্রায় স্বচ্ছ হয়ে যায়। খরা প্রবণ ও লবণাক্ত দুই ধরনের জমিতেই কিনোয়া চাষ সম্ভব। আমি আশা করি এই ফসলের প্রতি মানুষ আগ্রহী হবে এবং আগামীতে ব্যপকভাবে কিনোয় চাষ হবে।

প্রফেসর ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস আরও বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর গবেষণার পর পাইলটিং করতে মাঠ পর্যায়ে কিনোয়া চাষ শুরু করেছি। ফলাফলও আশানুরূপ। আমার আবেদনের পর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে কিনোয়া চাষের অনুমোদন দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি এ ফসল চাষ করে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঝামাঝি সময় ফলন ঘরে তোলা যায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কিনোয়ার মার্কেট তৈরি হলে আমাদের কৃষক কিনোয়া চাষ করে লাভবান হতে পারবেন। দেশে কিনোয়ার মার্কেট তৈরিতে কাজ চলছে। উৎপাদিত কিনোয়া দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।

এ বিষয়ে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (ক্রপ), মোঃ এনামুল হক বলেন কিনোয়া নামের এই ফসলটি একেবারেই নতুন গত বছর দেশের তিন জেলায় চাষ হয়েছিল স্বল্প পরিসরে তবে এবার বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলায় প্রায় ৭ বিঘা মাটিতে চাষ হয়েছে। আগামীতে আরো ব্যপকভাবে যেনো চাষ হয় সে বিষয়ের দিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হবে।

যাযাদি/এসআই

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে