রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমারখালীতে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ এক ব্যাক্তির মৃত্যূ

কুমারখালী(কুষ্টিয়া)প্রতিনিধি
  ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:৩৭
আপডেট  : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:১৯
কুমারখালীতে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ এক ব্যাক্তির মৃত্যূ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ জিয়ার হোসেন (৪৫) নামের এক ব্যাক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যূবরণ করেছেন।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় আহত আলতাফ হোসেন চিকিৎসাধীন। তাঁরা উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বেড়কালোয়া গ্রামের মৃত কেঁদো শেখের ছেলে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুমারখালীর কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন। তিনি জানান, নৌকায় ভোট দেওয়ায় জিয়ারকে প্রতিপক্ষের (ট্রাক মার্কা) লোকজন গুলি করেছিল। সোমবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, বের কালোয়া গ্রামের সাবেক মেম্বর আব্দুল খালেকের সঙ্গে কেঁদো শেখের ছেলেদের প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। পদ্মা নদীতে মাছ ধরা, যেকোনো নির্বাচনসহ বিভিন্ন অজুহাতে প্রায়শই দু'পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকালে বের কালোয়ারা মোড়ে দু'পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্রসহ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে দুই ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঘটনার পর আহত নৌকার সমর্থকের দাদী গোলাপি বেগম জানিয়েছিলেন, এমপি নির্বাচনে নৌকা হেরে যাওয়ার পর থেকে ট্রাকের সমর্থকরা বিভিন্নভাবে তাদের হুমকি দিচ্ছিলেন। শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে ট্রাকের সমর্থক স্থানীয় খালেক মেম্বারের ছেলে রিপন ও শিপনের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে।

এ সময় ঘরের মধ্যে ঢুকে তার দুই নাতি জিয়া ও আলতাফকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক আহত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। ঘরের মধ্যে ঢুকতে গেলে তাকে বাধা দেয় হামলাকারীরা। বাইরে থেকে তিনবার গুলির শব্দ শুনেছেন বলে জানান। পরবর্তীতে স্বজনরা আহতদের কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছেন। ঘটনার পর আহত আলতাফ জানিয়েছিলেন, নৌকা হেরে যাওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছিল ট্রাকের সমর্থক খালেক মেম্বারের ছেলেরা। শুক্রবার সকালে হঠাৎ তারা ১৫-২০ জন বাড়িতে এসে ভাঙচুর করে।তাদের দুইভাইকে মারপিট করে এবং হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙে দেয়।

কুমারখালীর কয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, এক শ্রেণীর মানুষ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ও এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে প্রতিপক্ষের (ট্রাক মার্কা) লোকজনের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেরা সাধু সাজার চেষ্টা করছে।

ঘটনায় সময় ঐ স্থানে কোন গোলাগুলি হয়নি। অথচ বলা হচ্ছে সে নাকি গুলিবিদ্ধ ছিলো। আসলে ঘটনায় জড়িত উভয় পক্ষই নৌকার সমর্থক এবং তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বিরোধ চলমান। এর আগে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। সঠিক ভাবে তদন্ত করলে সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে। এখানে ট্রাক প্রতীককে বিশেষ উদ্দেশ্যে জড়ানো হচ্ছে। এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। মোবাইল ফোনে নিহতের ছোট ভাই ইয়ারুল বলেন, ‘নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে ১২ জানুয়ারি সকালে সাবেক ইউপি সদস্য খালেক ও তার তিন ছেলে রিপন, লিটন, শিপনসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার দুই ভাইকে গুলি করে।

তাদের মধ্যে জিয়ার আজ পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি আসামিদের ফাঁসির দাবি করে থানায় মামলা করেছেন। এ বিষয়ে জানতে খালেক মেম্বর ও তাঁর ছেলে রিপন আলীর মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ১২ জানুয়ারি তিনি ফোনে বলেছিলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের উপর হামলা করেছিল। সেজন্য তারাও প্রতিপক্ষকে পাল্টা ধাওয়া দিয়েছিল। সে সময় কয়েকজনকে মারধর করা হয়। তবে গোলাগুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এ ব্যাপারে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম জানান, মৃত্যুর খবর তিনি শুনেছেন। ১৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে