রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

নড়াইলে রেল লাইনে উচ্চগতি সম্পন্ন রেলের ট্রায়াল শুরু

নড়াইল প্রতিনিধি
  ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫৪
নড়াইলে রেল লাইনে উচ্চগতি সম্পন্ন রেলের ট্রায়াল শুরু

১৮৬২ সালে রেল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ১৬২ বছর পর নড়াইলে রেলপথ চালু হয়েছে। যা পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প নামে পরিচিত। ৩৯ হাজার ২৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেল পথের কাজ চলছে ঝড়ের গতিতে। ঢাকা-যশোর রেলপথের ভাঙ্গা পর্যন্ত ইতিমধ্যে ট্রেন বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করছে। ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর অংশের রেলপথ নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের দিকে।

এদিকে গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন,সুপারভিশন ও কনসালট্যান্ট (সিএসসি)বিভাগের পক্ষ থেকে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল নিয়ে সতর্কমূলক বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। আজ (৩০ মার্চ) থেকে উচ্চগতি (১২০ কিঃমিঃ) সম্পন্ন রেল চলাচল পরীক্ষামূলক শুরু হয়েছে।

ঢাকা-যশোর রেলপথের ভাঙ্গা পর্যন্ত ইতিমধ্যে ট্রেন চলাচল করছে। ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর অংশের রেলপথ নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের দিকে। আগামীকাল শনিবার ও পরদিন রোববার ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর অংশে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন, সুপারভিশন ও কনসালট্যান্ট (সিএসসি) বিভাগের পক্ষ থেকে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল বিষয়ে সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প সংলগ্ন এলাকাবাসী ও এতদসংশ্লিষ্ট এলাকায় চলাচলকারী সর্বসাধারণের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আজ ৩০মার্চ ও ৩১ মার্চ ভাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে রূপদিয়া রেলস্টেশন পর্যন্ত টেস্ট রান এবং কমিশনিং এর নিমিত্তে উচ্চগতিতে (১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়) পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করবে। ট্রেন চলাচলের সময় রেললাইনের ওপর জনসাধারণের চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ। এ সময়ে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য আপনার পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও মানসিক প্রতিবন্ধী (যদি থকে) এবং গৃহপালিত প্রাণীসমূহকে নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

সেনাবাহিনীর সিএসসি বিভাগের অধীনে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যগণ ওই রেলপথ নির্মাণের কাজ তত্ত্বাবধান করছে। এ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, সতর্কতামূলক বিজ্ঞপিÍটি সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু ইউছুফ মো. শামীম আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর অংশের নির্মাণ কাজ শেষের পথে। কাজের অংশ হিসেবে ওই দুদিন ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত বিভিন্ন গতিতে ট্রেন চালিয়ে নির্মাণ অবস্থা পরীক্ষা করা হবে। আগামী জুনের মধ্যেই আশা করা যাচ্ছে এ রুটে ট্রেন চলবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিাঞ্চলকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে ওই রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ’ (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ ওই রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী এবং যশোরের পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়াতে রেলওয়ে জংশন থাকছে। এ ছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল এবং যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়াতে রেলস্টেশন হচ্ছে। ঢাকা থেকে লোহাগড়া রেলস্টেশনের দূরত্ব ১২৩ কিলোমিটার ও নড়াইলের দূরত্ব ১৩৮ কিলোমিটার। এদিকে নড়াইলের উপর দিয়ে রেলের উচ্চগতি সম্পন্ন ট্্রায়াল দেখতে ভিড় জমান নড়াইল পৌর এলাকার দূর্গাপুর,ভওয়াখালী,বরাশুলা সহ আশ পাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। রেল লাইনের কাজ দেখতে আসা ফরিদপুর জেলার রহিমা বেগম বলেন, আমার বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি শুনলাম এই রেলপথ দিয়ে নাকি কোলকাতা সহ ভারত ও অনান্য দেশে যাওয়া যাবে তাই খুব ভাল লাগছে।

দূর্গাপুর গ্রামের কৃষক খাজা মিয়া বলেন, রেল লাইন আগে বাড়ির কাছে হয়েছে আগে এ গ্রামে বাইরের মানুষের তেমন কোন আনা গোনা ছিলো না এখন অনেক অতিথি মানুষ দেখা যায় তাতে বেশ ভালো লাগে।

ডুমুরতলা গ্রামের সাবিক মোল্যা বলেন, শুনলাম আজকে বড় ট্রেন আসবে ঘন্টায় ১২০ কিঃমিঃ বেগে চলবে বেং জুন মাস থেকে আমরা ট্রেনে চলতে পারবো তাই জানতে পেরে বেশ উচ্চসিত লাগছে নিজের কাছে।

মোঃ আল আমিন গাজী বলেন, নড়াইলের উপর দিয়ে উচ্চগতি সম্পন্ন রেলের চাকা পড়েছে নড়াইলের মাটিতে এতে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি ১৬২ বছর পর নড়াইল মানুষ নিজ এলাকা থেকে রেলগাড়িতে চড়ে দেশ বিদেশে ভ্রমন করতে পারবে।

উল্লেখ্য, রেলওয়ে সুত্রে জানা গেছে, ঢাকা-যশোর রেলপথের ভাঙ্গা পর্যন্ত ইতিমধ্যে ট্রেন চলাচল করছে। প্রকল্পের শেষ অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৮৬ কিলোমিটার। প্রকল্পটি শেষের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে ‘পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ নামে এটি অনুমোদন হয়। অনুমোদনের সময়ে পুরো প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে এই প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত (ফাস্ট ট্র্যাক)।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে