ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক সংঘর্ষে ১জন নিহত এবং ৮৫জন আহত হয়েছে। আজ শনিবার ধান কাটা নিয়ে জেলার সরাইল উপজেলার শাহাজাদাপুর ইউনিয়নের শাহজাদাপুর ও গত শুক্রবার দুপুরে ক্রিকেট খেলা নিয়ে জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের ফান্দাউক গ্রামে পৃথক এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম কামাল উদ্দিন-(৫৫)। তিনি শাহাজাদাপুর গ্রামের শাহাদাৎ আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, একটি সরকারি জায়গায় ধান চাষ করা ধান নিয়ে সরাইল উপজেলার শাহাজাদুপর গ্রামের রিপন মিয়ার দলের সাথে একই এলাকার কাউছার, মাসুকও আফজাল মিয়ার দলের বিরোধ চলে আসছিল।
সম্প্রতি বিরোধ নিস্পত্তির জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ উভয় পক্ষ শালিস সভায় বসে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়েও সভা হয়। উভয় সভায় সিদ্ধান্ত হয় সরকারি ওই জমির ধান দুই পক্ষের কেউ কাটতে পারবেন না এবং এই ধান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের তত্ববধানে কাটা হবে। উভয় পক্ষ প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে সম্মত হয়ে স্বাক্ষর করে যান।
ঈদের পরদিন শুক্রবার ভোরে সালিশের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউপি সদস্য জুয়েল, নাজমা বেগম, আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুন্না, আজিজ ও ময়েজের নেতৃত্বে দুই শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওই জমির ধান কেটে নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লুকিয়ে রাখা ধান উদ্ধার করে জব্দ করে।
এরই জেরে শনিবার সকাল থেকে দফায় দফায় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় কামাল উদ্দিন নামে একজন মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় উভয়পক্ষের ৫৫জন আহত হয়েছেন। তাদেরকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে সরাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ.স. ম.আতিকুর রহমান বলেন, পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রনে আছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অপর দিকে শুক্রবার দুপুরে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের ফান্দাউক গ্রামে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩০জন আহত হয়।
স্থানীয়রা জানায়, পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (ঈদের দিন) ফান্দাউক গ্রামে প্রীতি ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হয়। খেলা চলাকালীন সময় দুই তরুনের মধ্যে প্রথমে বাকবিতন্ডা ও পরে হাতাহাতি হয়।
এ নিয়ে পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এর মধ্যে একটি পক্ষকে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল আওয়াল ও অপর পক্ষটিকে মোঃ রিপন মিয়া সমর্থন দেয়। পরে বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে বিচার-সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির আলোচনাও হয়। পরদিন শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে সাধুপাড়া নূরে মদিনা মসজিদে যায় আওয়াল মিয়ার পক্ষের লোকজন। নামাজ থেকে বের হওয়ার পর আওয়াল মিয়ার পক্ষের লোকদের উপর অতর্কিত হামলা করে রিপন মিয়ার লোকজন।
পরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষে মোঃ নূরে আলম, মো. সজল, নাছির মিয়া, সাগর মিয়া, শিমুল মিয়া, তফু মিয়া, দিদার মিয়া, কাজল মিয়া, ফয়সাল মিয়া, হৃদয় মিয়া ও নূরেন বেগম, গোলাম নূর, রুবেল মিয়া, আলাউদ্দিন, শাহনাজ বেগম, জিনিয়া বেগম, ফাতেমা বেগম ও রুজিনা বেগমসহ উভয়পক্ষের ৩০ জন আহত হয়। আহতদেরকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে আব্দুল আওয়াল বলেন, ছোট বাচ্চাদের ক্রিকেট খেলা নিয়ে সামান্য বাকবিতন্ডা হয়। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয়ভাবে বিচার-সালিশের ব্যবস্থাও হয়। কিন্তুশুক্রবার নামাজ পড়তে গেলে রিপন মিয়ার পক্ষের লোকজন আমাদের পক্ষের লোকদের উপর হামলা করে। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এ ব্যাপারে রিপন মিয়ার পক্ষের মোঃ রাজা মিয়া বলেন, ঈদের দিন ছোট ছেলেদের মধ্যে মারামারি হয়। এই নিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মাতব্বররা শেষ কইরা দিব বলছিল। কিন্তু শুক্রবার নামাজ থেকে বের হইবার পর আওয়াল মিয়ার লোকজন আমাদের উপর হামলা করে। এর বেশি আমি কিছু জানিনা।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সোহাগ রানা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এলাকায় অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
যাযাদি/ এস