ফরিদপুরের কানাইপুরে আলোচিত সড়ক দুর্ঘটনার পর ৭ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন মারাত্মক আহত সুরাইয়া বেগম (৫৫)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ভোর রাতে তিনি মারা যান।
এর আগে ওই দুর্ঘটনায় সুরাইয়া বেগমের ছেলেসহ ওই পরিবারের চারজন সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।
জানা যায়, ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুরের তেঁতুলতলা নামক স্থানে গত ১৬ এপ্রিল এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জনসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ছত্রকান্দা গ্রামের বাসিন্দা ও সচিবালয়ের লিফট অপারেটর রাকিবুল ইসলাম মিলন মোল্যার পরিবারের ৪ সদস্য নিহত হন। ওই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় রাকিবুল ইসলাম মিলন মোল্যা (৪২), স্ত্রী সুমি বেগম (৩৫), বড় ছেলে রুহান (৯) এবং ছোট ছেলে আবু সিনান (৬) নিহত হন। আর মারাত্মক আহত হন মা সুরাইয়া বেগম (৫৫)। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ছয় দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন। মঙ্গলবার ভোররাতে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
প্রসঙ্গত, রাকিবুল ইসলাম মিলন ও আশেপাশের আরও কয়েকজন ত্রাণের টিন আনার জন্য পিকআপ ঠিক করেছিলেন ফরিদপুর যেতে। মিলনের মা-স্ত্রী সাথে যান ডাক্তার দেখানোর জন্য। এ সুযোগে ছেলে দুটো বায়না ধরে মা-বাবার সাথে যাওয়ার জন্য। আর এ যাওয়াই হয় তাদের সকলের অন্তিম যাত্রা।
ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া সুরাইয়া বেগম বীরমুক্তিযোদ্ধা তারা মোল্যার স্ত্রী। এর আগে ছেলে রাকিব, ছেলে বৌ সুমি, দুই নাতনি রুহান ও সিনানকে হারিয়ে তারা মোল্যা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। এরপর স্ত্রীও চলে গেল না ফেরার দেশে।
রাকিব ঢাকাতে চাকরি করলেও পরিবার থাকতো বাড়িতে। যৌথ পরিবার ছিলো তাদের। বড় ছেলে রুহান (৯) পাশের আলফাডাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির আর ছোট ছেলে আবু সিনান (৬) তাহেরা রাশেদ লিটল এনজেল স্কুলের নার্সারি শ্রেণির ছাত্র ছিলো। চলতি মাসের ৮ তারিখে ঈদের ছুটিতে মিলন বাড়ি আসেন। বাড়ি আসার সময় পরিবারের সবার জন্য ঈদের পোশাক কিনে আনেন। এবারের ঈদে পোশাক কেনাই তার জীবনের শেষ ঈদ শপিং- একথা মানতেই যেন পারছে না তার পরিবারের সদস্যরা।
প্রতিবেশী মিম আক্তার বলেন, প্রতিবেশী একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুতে আমরা শোকাচ্ছন্ন, এ শোক সইবার নয়। বড় ভাবি হাসি বেগম বলেন, ত্রাণের টিন আনার জন্য ফরিদপুর ডিসি অফিসে যাওয়ার কথা ছিলো। এজন্য পিকআপ ভাড়া করা হয়। মা-স্ত্রীকে ফরিদপুরে ডাক্তার দেখানো হবে। এজন্য তারাও সাথে যায়। আবার ছেলে দুটো বায়না করায় তাদেরও সাথে নেয়া হয়। এক সড়ক দুর্ঘটনা সবকিছু কেড়ে নিল।
যাযাদি/ এসএম