সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

বক দিয়ে বক শিকার

মো: জায়েজুল ইসলাম, পূর্বধলা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:৩৬
বক দিয়ে বক শিকার
ছবি : যায়যায়দিন

কলাপাতা এবং সুপারি গাছের পাতা দিয়ে বিলের মাঝে তৈরী করা হয়েছে ছোট্ট ঝুপরি ঘর। এই ঝুপরি ঘরের ভেতরে অবস্থান করছে শিকারিরা। আর বাঁশের কাঠিতে বেঁধে রাখা হয়েছে একটি পালিত বক। ছাউনির ভেতরে অবস্থানকারী শিকারিরা কাঠিতে বাঁধা বকগুলোকে মাঝে মধ্যে নাড়া দেন।

এতে কাঠিতে বাধা বকের উড়ন্ত ডানা দেখে খাবারের সন্ধানে বিলে আসা বকগুলো ছাউনির ওপরে বসে। আর বসামাত্রই ঝুপরির ভেতরে থাকা শিকারিরা সুযোগ বোঝে খপ করে ধরে ফেলছেন। এভাবে প্রতিনিয়ত ফাঁদ পেতে বক ধরছেন শিকারিরা। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা সদর ইউনিয়নের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন কোমা বিলে আজ সোমবার এমন চিত্র দেখা গেছে। এখানে বক ধরার জন্য পাঁচটি ফাঁদ পাতা হয়েছে। খোঁজনিয়ে জানা গেছে উপজেলার হোগলা, ঘাগড়া, জারিয়া, ধলামুলগাঁওসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এভাবে অবাধে বক শিকার করা হচ্ছে।

কোমা বিলের পাশের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার জানান, বিলের পানি কমতে থাকায় মাছ খাওয়ার আশায় অনেক দুরদুরান্ত থেকে বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ছুটে আসে। তবে একসময় এই বিলে প্রচুর বক দেখা গেলেও এখন পরিমানে তা খুব কম। তিনি আরো জানান, এখানের শিকারীরা প্রতিদিন খুব সকালে ও বিকেলে বক শিকার করে থাকে। ধৃত বক স্থানীয় বাজারে তারা ৮০ থেকে ৯০টাকা করে প্রকাশ্যে বিক্রি করে থাকেন

অথচ বন্য প্রাণী আইন, ২০১২ অনুযায়ী পাখি শিকারের জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তা ছাড়া একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।

পুর্বধলা পরিবেশ আন্দোলন সাধারন সম্পাদক রাশেদ খান সুজন জানান, ইতোপুর্বে পূর্বধলা উপজেলাকে পাখি নিধন মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষনা করেছিল উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু এর পরেও এখানে অবাধে পাখি নিধন করা হচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক অবহিতকরে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এসব বন্ধ করার দাবী জানান তিনি।

পুর্বধলা সরকারী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মোঃ শাহজাহান কবীর খান বলেন, বক ও অন্যান্য প্রজাতির পাখি ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।তাই অবাধে পাখি নিধন করতে হবে।

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার, বিশিষ্ট পাখী প্রেমী ব্যক্তিত্ব আনসার উদ্দিন খান পাঠান বলেন, পাখির সাথে আমাদের প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্র জড়িয়ে আছে। এভাবে পাখী ধরা মোটেও কাম্য নয়। পাখি ধরা বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনগুলিকেও এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ খবিরুল আহসান এই প্রতিবেদককে জানান পাখি ধরা দন্ডনীয় অপরাধ। তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে