কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, খামখেয়ালীপনা এবং চরম প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘ ৪০ বছরেও প্রস্তাবিত কেশবপুর শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ সংক্রান্ত ফাইলপত্র লাল ফিতায় আটকা পড়েছে।
১৯৮৪-৮৫ অর্থ বছরে কেশবপুরকে শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। জেলা বিসিকের তত্ত¡াবধানে প্রতিজনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা হারে তিন শতাধিক সদস্য সেসময় সংগৃহীত হয়েছিল। এখানে শিল্পনগরীর জন্য স্থান নির্বাচনও হয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেস্থান খরিদ করা হয়নি এবং সেই সাথে মুখ থুবড়ে পড়েছে শিল্পনগরীর প্রকল্প।
সংশ্লিষ্ট একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনিক অন্তর্দ্ব›েদ্বর কারণে কেশবপুর শিল্পনগরীর কাজ স্তিমিত হয়ে পড়েছে। ফলে সংগৃহীত সদস্যরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ পর্যন্ত কর্তপক্ষ তাদের সাথে কোনরূপ যোগাযোগ করেনি। বরং সদস্যরাই সদস্য ফি’র টাকা ফেরতের জন্য যশোরস্থ বিসিক কার্যালয়ে বারংবার ধরনা দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। আশ্চার্য হলেও সত্য যে দীর্ঘ ৪০ বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা এখানে শিল্পনগরী স্থাপনের ব্যাপারে আর কোন আগ্রহ দেখায়নি।
উল্লেখ্য, কেশবপুর যশোর জেলার অন্যতম শিল্প স্থান বলে খ্যাত। এখানে ক্ষুদ্র শিল্প থেকে শুরু করে বড় বড় অনেক শিল্প গড়ে উাঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার ব্যবসায়িদের মধ্যেও আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু এককভাবে এবং অনেক ক্ষেত্রে মূলধনের অভাবে এসব শিল্প গড়ে উঠতে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ৮৫ সালে বিসিকের উদ্যোগে শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগে ব্যবসায়ি মহলের নতুন প্রানচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নিস্ক্রিয়তা তাদেরকে করেছে হতাশ। এখানে বাঁশ, কাঠ, ঢেঁকি, কামার কুমার, হস্তচালিত তাঁত, খরগোশ প্রজনন কেন্দ্র, পোল্ট্রি, ডেইরি, ডাক ফার্ম, হোমিওপ্যাথিক শিশি কারখানা, কর্কের কারখানা, বোতাম কারখানা, বাঁশ ও বেতের ডেকরেটিং শিল্প, রঙের কারখানা, তুলি ও ব্রাশ কারখানা, ঘানি শিল্পসহ বহুমুখী শিল্প স্থাপনের আগ্রহ থাকা সত্তে¡ও মাঝারী ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক ব্যবসায়িরা কেবলমাত্র পুঁজির অভাবে এসব শিল্প বহুমুখী করতে পারছে না। অথচ স্বল্প পুঁজি বিনিযোগের মাধ্যমে এসব শিল্প সম্প্রসারণ সম্ভব। যার মাধ্যমে হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থান হতে পারে।
কর্তৃপক্ষ সম্ভবনাময় এ সব শিল্পকে গতিশীল করবার জন্যে এক সময় উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বাস্তবায়নে ব্যর্থতা সকলকে হতাশ করেছে।
কেশবপুর শহরের ব্যবসায়ি হাজী রুহূল কুদ্দুস বলেন, এই অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প গড়ে উঠলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় শিল্পের জন্যে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি ও উৎপন্ন পণ্য রপ্তানির সকল সুযোগ বিদ্যমান থাকায় আঞ্চলিক উন্নয়নে ব্যাপক সহায়তা রাখবে।
যশোর বিসিকের ভারপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক ফরিদা ইয়াসমিন জানান, যশোর জেলার কয়েকটি স্থানে শিল্পনগরী গড়ে তোলার প্রস্তাবনা রয়েছে। এরমধ্যে রামনগর শিল্প নগরীর কাজ চলমান রয়েছে। যশোর-নড়াইল সড়কের হামিদপুরের শিল্পনগরীর প্রস্তাবনা বাতিল করা হয়েছে। তবে কেশবপুর শিল্প নগরী গড়ে তোলার প্রস্তাবনা অনেক আগের। কি অবস্থায় রয়েছে তা কাগজপত্র না দেখে বলতে পারবো না।
যাযাদি / এআর