কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী সংকটে এলাকাবাসী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০জন জুনিয়র কনসালটেন্টের মধ্যে ৪জনের পদই শূণ্য, মেডিকেল অফিসার তিন জনের মধ্য তিনটি পদ শূণ্য, প্রধান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক, হিসাবরক্ষক, ক্যশিয়ারে একটি করে পদ, অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটরের দু‘টিসহ মোট ৫টি পদ শূণ্য রয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (রেডিওথেরাপি) পদ শূণ্য থাকায় আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি বছরের পর বছর বন্ধ থাকার পর গত প্রায় এক বছর পূর্বে সপ্তাহে দু‘দিন মেশিনটি চালু থাকলেও বর্তমানে কারিগরি ক্রটির কারণে গত দু‘মাস থেকে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আর আগে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সপ্তাহে দু‘দিন এসে রোগীদের আলট্রাসনোগ্রাম করাতেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া) কাগজে-কলমে থাকলেও তিনি গত প্রায় ২বছর যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানা যায়। জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া) না থাকায় অপারেশন রোগীদের অজ্ঞান করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যার ফলে বিভিন্ন অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকতে দেখা যায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দারোয়ান/সিকিউরিটি গার্ডের দু‘টি পদের মধ্যে দু‘টি পদই শূণ্য থাকায় হাসপাতালটি নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হচ্ছে। ৫জন পরিচ্ছন্নতকর্মীর মধ্যে ২জনের পদ শূণ্য থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্নস্থানে অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকতে দেখা যায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) ১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) ১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থ-সার্জারী) ১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) ১জন, প্যাথলজিষ্ট ১জন, মেডিকেল অফিসার ১জন, মেডিকেল অফিসার (ইনডোর) ১জন, মেডিকেল অফিসার (ইউনানী) ১জন, সিনিয়র ষ্টাফ নার্স ৫জন, প্রধান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক ১জন, হিসাব রক্ষক ১জন, ক্যাশিয়ার ১জন, স্টোর কিপার ১জন, ফার্মাসিষ্ট ১জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (রেডিওথেরাপি) ১জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ডেন্টাল) ১জন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ২জন, সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক ২ জন, স্বাস্থ্য সহকারি ৪জন, সহকারি নার্স ১জন, টি.এল.সি.এ ১জন, ড্রাইভার ১জন, কম্পাউন্ডার ১জন, কার্ডিওগ্রাফার ১জন, জুনিয়র মেকানিক ১ জন, ও.টি বয়/ও.টি এটেনডেন্ট ১জন, অফিস সহকায়ক ৩জন, ওয়ার্ড বয় ২জন, কুক/বাবুর্চি ১জন, আয়া ১জন, পরিচ্ছন্ন কর্মী ২জন, মালী ১জন, দারোয়ান/সিকিউরিটি গার্ড ২ জন ও ল্যাব এটেনডেন্ট ১জনের পদ শূণ্য রয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরের ভয়াবহ বন্যার পানিতে বন্যা কবলিত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ এলার্জিতে ভুগলেও জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) না থাকায় মানুষ এলার্জি রোগের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এছাড়া ডাক্তারদের অন্যান্য পদগুলোও শূণ্য থাকার পাশাপাশি কর্মচারীদের পদ শূণ্য থাকায় এলাকাবাসী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের কাদবা গ্রামের শামছুন্নাহার বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এলার্জি রোগে ভুগলেও এলার্জির ডাক্তার না থাকায় সেবা নিতে পারছি না। বেসরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত ভিজিট দিয়ে ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন রেজা মোঃ সারোয়ার আকবর বলেন, স্বাস্থ্য পরিদপ্তরে জনবল সংকটের রিকুইজিশন দেওয়া আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জনবল সমন্বয় করে শূন্য পদ পূরণ করা হবে।
নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মুঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন পদগুলো নিয়মিতভাবে আপগ্রেড হয়। শতভাগ থাকে না। শূণ্যপদগুলো পদায়িত হলে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হবে।
যাযাদি/ এসএম