চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বৃদ্ধি করবে ম্যানেজড অ্যাকুইফার রিচার্জ (এমএআর) কার্যক্রম। ঘরের ছাদে কিংবা টিনের ছাউনিতে পড়া বৃষ্টির পানি ফিলট্রেশন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বোরহোলে ফেলা হবে। এর ফলে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে ড্রেনে বা জলাশয়ে কিংবা খাল-বিলে না গিয়ে সরাসরি বোরহোলে পড়বে এবং এর মাধ্যমে ভূগর্ভের পানির স্তর পুনর্ভরণ হবে।
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উন্নয়নের লক্ষে এক্সটেনডেড কমিউনিটি ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইসিসিসিপি)-ড্রাউট প্রকল্পের আওতায় এই কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি।
এসময় তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমরা একটি জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমি এখানে এসে জানতে পেরেছি যে, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি পিকেএসএফ’র অর্থায়নে সদর উপজেলায় বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এই সবগুলো কাজ জনগুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আমাদের যে সমস্যা, সেগুলো মোকাবিলায় এই কার্যক্রম নিঃসন্দেহে সফল হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, এই বছরে তাদের (প্রয়াস) যে টার্গেট আছে ৪০টি এমএআর স্থাপন করবে, তার একটি কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হলো। অবশিষ্টগুলো খুব শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করবে। সদর, গোমস্তাপুর, নাচোল উপজেলার আরো কিছু কার্যক্রম রয়েছে, সবগুলো একসাথে অনুমোদন প্রদান করব। আমরা চাই, এসব কার্যক্রমগুলো হওয়া দরকার। তিনি আরো বলেন, আমাদের ঝিলিম এবং নাচোল এই অঞ্চলগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, এই জন্য এই প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম শুরু করেছে। এই এমএআর প্রকল্প যদি সফল হয়, তাহলে আমাদের ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ করতে পারি এবং এই পানি যদি ইনজেক্ট করে ভূগর্ভে ফিরিয়ে দিতে পারি তাহলে আমাদের যে পানির স্তর, সেটা বৃদ্ধি পাবে। সকলের উদ্যোগের মাধ্যমে ক্লাইমেট চেঞ্জের যে ক্ষতিকর দিক, সেটা আমরা মোকবিলা করতে সক্ষম হবো। সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে দুর্যোগ মোকাবিলা সহজ হবে।
আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি এখন থেকে সচেতন হই, তাহলে ইনশাআল্লাহ আগামীতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। তিনি বলেন, বিএমডিএ যেমন উদ্যোগ নিচ্ছে যে, বরেন্দ্র এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সেই একইভাবে প্রয়াসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এ জন্য প্রয়াসকে পিকেএসএফ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। আমি এই কার্যক্রমের সফলতা কামনা করছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন। তিনি তার বক্তব্যে জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে মোট ৪০টি এমএআর স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাছমিনা খাতুন, সহকারী কমিশনার জাহিদ হাসান, ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম লুৎফুল হাসান।
অনুষ্ঠানে প্রয়াসের পরিচালক এবং ইসিসিসিপি-ড্রাউট প্রকল্পের ফোকাল পারসন পঙ্কজ কুমার সরকার সূচনা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রয়াসের কনিষ্ঠ সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম।
এসময় ইসিসিসিপি-ড্রাউট প্রকল্প সমন্বয়কারী বকুল কুমার ঘোষ, ঝিলিম ইউনিয়নের প্রশাসিনক কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি পালসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্পটিতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড জিসিপি ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, বরেন্দ্র অঞ্চলে খরা প্রতিরোধে বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে সংরক্ষণের মাধ্যমে পানির স্তর বাড়ানো। এমএআর স্থাপনার পাশাপাশি খাল ও পুকুর খননের মাধ্যমে ভূউপরিস্থ পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি এবং খরা সহনশীল ফসল ও ফল চাষে পানি ব্যবস্থাপনায় কার্যকর অবদান রাখবে।
এই প্রকল্প জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি সময়োপযোগী ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অতিথিবৃন্দ। উল্লেখ্য, ভূগর্ভের পানির স্তর দিন দিন ভয়াবহভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে এবার ঝিলিম ইউনিয়নসহ সদর, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ধান চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ।