বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

চান্দিনায় আশ্রয়ণ প্রকল্প এখন ভুতের বাড়ি

শাহজালাল সরকার সাজু, চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫১
চান্দিনায় আশ্রয়ণ প্রকল্প এখন ভুতের বাড়ি
ছবি: যায়যায়দিন

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার ভূমিহীনদের কথা চিন্তা করে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় ভূমিহীনদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সেমিপাকা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে চান্দিনা উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫টি ধাপে উপকারভোগীদের মাঝে ২১৬টি দৃষ্টিনন্দন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়; কিন্তু ঘর বরাদ্দ পেয়েও সেখানে বর্তমানে বেশিরভাগ ঘরে ঝুলছে তালা। সঠিক নিয়মে বরাদ্দ না হওয়া এবং প্রকৃত ভুক্তভোগীরা ঘর বরাদ্দ না পেলেও পেয়েছেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের লোকজন। তাই এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে।

আশ্রয়ণের ঘরে তালা ঝুললেও উঠান ও বারান্দায় হরহামেসাই চলছে মাদক সেবীদের আড্ডা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা নাজমা আক্তার বলেন, এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে অনেকে থাকেন না। তাদের নিজের বাড়ি আছে, তারা সেখানে থাকেন। আর দু-একজন ঢাকায় থাকেন এজন্য তাদের ঘরে তালা দেওয়া আছে। আর বেশিরভাগ মানুষ ঘরে থাকেন না। ঘরগুলো ফাঁকা পড়ে আছে দীর্ঘদিন।

ঘর বরাদ্দ পাওয়া দিনমজুর সফিক মিয়া সহ অনেকেই বলেন, এখানে কাছাকাছি কোনো বিদ্যালয় না থাকায় গ্রামের এক বিদ্যালয়ে সন্তানকে ভর্তি করিয়েছি। তাই আসা যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে এখানকার ঘরে তালা ঝুলিয়ে রেখেছি। এদিকে ঘর না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রেনু বেগম বলেন, প্রকৃত যাদের দরকার তারা ঘর পাননি। যারা প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগের লোকজন ধরেছেন, তারাই ঘর পেয়েছেন; কিন্তু তারা ঘর পেলেও সেখানে একদিনের জন্যও বসবাস করেননি। অন্যত্র বসবাস করছেন। ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের কেরানির বাসায় কাজ করা পরিজা বেগম। তিনি জানান, তৎকালীন তহশিলদার ও জয়নাল স্যারের সহায়তায় তিনি ঘর পেয়েছেন। মাসিক মজুরিভিত্তিক কাজ করেন বলে তিনি নিজেকে অসহায় ও ভূমিহীন দাবি করেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগের লোকজন। তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় প্রকৃত ভূমিহীন-গৃহহীনরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন বলেন, ফাঁকা ঘরগুলো শনাক্তকরণে চেষ্টা চলছে। প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রকৃত অসহায়দের ঘর প্রদান করা হবে। কেউ অসাধু উপায়ে ঘর পেয়ে থাকলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার জানান, ঘরগুলো যখন দেওয়া হয়েছে তখন যারা গৃহহীন তাদের দিয়েছিলাম। এখন চান্দিনাসহ গোটা জেলাতে কিছু মানুষ ঘরগুলোতে থাকছে না। যেহেতু কবুলিয়ত দলিল হয়ে গেছে এটার একটা প্রক্রিয়া আছে। টানা তিন মাস কেউ না থাকলে আমরা বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দিচ্ছি। এর পরও কেউ না এলে ঘর বাতিল করা হবে। আগ্রহী যারা আছে তালিকা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে