শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

ধর্মপাশায় প্রকাশ্যে চলছে মাটি  বিক্রির হিড়িক 

ধর্মপাশা- মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১১ মার্চ ২০২৫, ১৪:৫৬
ধর্মপাশায় প্রকাশ্যে চলছে মাটি  বিক্রির হিড়িক 
ছবি: যায়যায়দিন

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় ফসলি ও সরকারি জমির বিভিন্ন স্থান থেকে এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রির হিড়িক পড়েছে। ফসলি ও সরকারি জমির ৩০ থেকে ৩৫ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে আশপাশের কৃষিজমিও ভেঙে পড়ছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় প্রশাসন।

রবিবার ও সোমবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উডজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের চকিয়াচাপুর গ্রামের সামন থেকে আওয়ামীলীগ নেতা মো, বারেক মিয়ার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে দিনে ও রাতে সরকারি ও ফসলি জায়গা থেকে অবাধে মাটি কেটে নিয়ে অন্যত্র বিক্রির করছে।পাশাপাশি সেলবরষ ইউনিয়নের উওর বীর গ্রামের সামন থেকে আওয়ামীলীগ নেতা মো. ধরন মিয়া তার ছেলে বাংলাদেশ আওয়ামী বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি লীগের সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাংগঠিক সম্পাদক মো, নাঈম মিয়ার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে দিনে ও রাতে সরকারি ও ফসলি জায়গা থেকে অবাধে মাটি কেটে নিয়ে অন্যত্র বিক্রির করছে। এ ছাড়াও উপজেলার ও ভাটগাও গ্রামে এবং জিংলিগড়ি গ্রাম ও ভাটাপাড়া এবং কাকিয়াম গ্রামের সামন থেকে সরকারি জমি থেকে এই চক্ররা দীর্ঘদিন ধরে দিনে ও রাতে সরকারি ও ফসলি জায়গা থেকে অবাধে মাটি কেটে নিয়ে অন্যত্র বিক্রির করছে। দিনের পর দিন মাটি কেটে নেওয়ায় গভীর খাদে পরিণত হয়েছে এলাকার ফসলি জমি। পাশাপাশি উপজেলার কয়েকটি স্থানে বিভক্ত হয়ে ফসলি ও সরকারি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্রটি। ফলে ফসল উৎপাদন করা যাচ্ছে না ফসলি জমিতে। পাশাপাশি জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন ফসলি জমির মালিক ও কৃষকরা। স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হলে প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব স্পটে মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় পর আবার শুরু হয় একই স্থান থেকে মাটি বিক্রির হিড়িক। এলাকাবাসী জানান, এই চক্ররা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের সামনেই সরকারি জায়গা থেকে অবাধে মাটি কেটে নিচ্ছে। মাঝে মধ্যে জরিমানা আদায় করা হলেও রহস্যজনক কারণে মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানায়, সরকারি ও ফসলি কৃষি জমির মাটি প্রতিদিনই ভেকু দিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ফুট গভীর গর্ত করে কেটে নিয়ে গেলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। একটি জমির মাটি গভীর করে ভেকু দিয়ে কেটে নেওয়ার পর পার্শ্ববর্তী জমি এমনিতেই ভেঙে গিয়ে গর্তে পরিণত হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটার ফলে দিন দিন ফসলি জমিগুলো পরিণত হচ্ছে ডোবা ও অপরিকল্পিত পুকুর-জলাশয়ে।

স্থানীয় কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন,এক সময় জমিগুলো তিন ফসল ফলানো হতো। গভীরভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমির মাটি এতটাই গভীর করে কেটে নিয়ে যায়, দেখলে কৃষি জমিকে যে কেউ পুকুর বলতে হবে। প্রতিটি জমি ভেকু দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট গভীর করে মাটি কটে নিয়ে যাচ্ছে। এই মাটি বিক্রির চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।

ধর্মপাশা উপজেলা যুবদের সাবেক আহবায়ক ও উপজেলা বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দিন ও রাত মাটির বড় বড় ট্রাক চলার কারনে এলাকায় থাকায় কষ্টকর হয়ে পরেছে। এই চক্ররা দীর্ঘদিন ধরে দিনে ও রাতে সরকারি ও ফলসি জায়গা থেকে অবাধে মাটি কেটে নিয়ে অন্যত্র বিক্রির করছে। দিনের পর দিন মাটি কেটে নেওয়ায় গভীর খাদে পরিণত হয়েছে এলাকার ফসলি জমি। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি এই অবৈধ মাটিকাটার কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।

ফসলি জমির মাটি বিক্রি চক্রের মো, বারেক মিয়া বলেন, অবৈধভাবে মাটি কেটে অন্য জায়গায় বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, সবাইতো এভাবেই ব্যবসা করে। অনুমতি নিয়ে কে মাটি কাটে। প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই মাটির ব্যবসা করছি। আপনাদের কি করতে হবে বলেন!

অবৈধভাবে সরকারি ও ফসলি জমির মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনি রায় বলেন, সরকারি ও ফসলি জায়গা থেকে মাটি কাটার অপরাধে নিয়মিত জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। অভিযানে চার লরি চালককে পঞ্চম হাজার টাকা করে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযান অব্যাহত আছে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে