গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে অবৈধ বেকারীতে সয়লাব হয়ে গেছে। এসব অবৈধ বেকারীতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিষাক্ত দ্রব্য দিয়ে মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যসামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে।
আর এসব খাদ্যসামগ্রী প্রতিদিনই ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলার সর্ব্বত্র এবং আশেপাশের লোহাগড়া, আলফাডাংঙ্গা, মুকসুদপুর ও বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে।
জানা গেছে, সরকারী নিয়ম-কানুনের কোন প্রকার তোয়াক্কা না করেই কাশিয়ানী উপজেলা রামদিয়া বাজারের গোডাউনের পাশে, রামদিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে পাশে, ভাটিয়াপাড়া বাজারে, জয়নগর বাজারে এবং জঙ্গল বাগিয়ায় বেপরোয়াভাবে চালানো হচ্ছে এসব বেকারীর কর্মকাণ্ড।
যুগযুগ ধরে কোন প্রকার কাগজপত্র ছাড়াই চলছে এসব বেকারী। বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন ইউনিয়নের বেকারিগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিষিদ্ধ মেডিসিন সালটু ও রঙ দিয়ে খাদ্যসামগ্রী তৈরি করে বিভিন্ন নামকরা কোম্পানীর ব্র্যান্ডের মোড়কে এসব বাজারজাত করা হচ্ছে।
এসব খাদ্যসামগ্রী খেয়ে অনেকেই পেটের পীড়াসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন উপজেলার মানুষ।সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার আনাচে-কানাচে অসংখ্য বেকারী গড়ে উঠেছে। সরকারি অনুমতি ছাড়াই মানহীন পণ্য উদপাদন করে বাজারজাত করছে এ সকল বেকারীর মালিক।
বেকারিতে ব্যবহৃত জিনিস নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। শ্রমিকরা খালি গায়ে ও খালি পায়ে নোংরা পরিবেশে এসব খাদ্যসামগ্রী তৈরি করছেন এবং পণ্যের পাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন।
তাদের গায়ের ঘাম ঝরতে দেখা গেছে। হাত পরিস্কার না করেই খাবার মালামাল তৈয়ারী করছে। আটা-ময়দা প্রক্রিয়াজাত করানো কড়াইগুলোও অপরিষ্কার ও অত্যান্ত নোংরা।
ডালডা এবং ক্ষতিকর রং দিয়ে তৈরি করা ক্রিম। পাত্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভন ভন করছে। কয়েক দিনের পুরানো ও নোংরা ময়দা, ডাল্ডা বা তেলেই ভাজা হচ্ছে পণ্যসমাগ্রী।
ময়লা হাতেই প্যাকেট করা হচ্ছে ওইসব পণ্য। উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ছাড়াই বাহারি মোড়কে বনরুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারিসামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। বেকারী মালিকরা আট থেকে দশ বছরের শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের জাংগাল বাঘিয়া এলাকার তিন্নি বেকারী মালিক মো. লেলিন মোল্যা এ প্রতিবেদককে জানান, ‘কাগজপত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ব্যবসা করে আসছি। উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক এসব জানেন। তার সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা হয়।’
বেকারী মালিকদের অনিয়মের এবং নোংরা পরিবেশের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা স্যানেটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. বুলবুল হোসেন বলেন, ‘বেশিরভাগ বেকারীর কোন লাইসেন্স নেই। অনুমোদহীনভাবে পণ্য উৎপাদন করছে। আমার লোকবল নাই, বরাদ্দ নাই। আমি একা মানুষ কি করতে পারি।’
কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ভেজাল কেমিক্যাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা এসব খাবারসামগ্রী খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। পেট ব্যথা, চামরায় চর্মরোগ, কিডনিতে সমস্যা, খাদ্য নালীতে সমস্যা, শরীর দুর্বলসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
উপজেলা স্যানেটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. বুলবুল হোসেন বলেন, কাশিয়ানী উপজেলায় বেশীর ভাগ বেকারীর কোন লাইসেন্স নাই। অনুমোদহীন ভাবে পণ্য উৎপাদন করছে। আমরা এ বেকারীগুলোতে বহুবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছি। কয়েকটি বেকারী বন্ধও করেছি। কিন্তু তারা গোপনে রাতের অন্ধকাওে মাল উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলেছি অভিযান পরিচালনা করার জন্য। কোন বেকারীর বিএসটিআইয়ের অনুমতি নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জান্নাত জানান, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।