শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

বিএনপির সংঘর্ষে নিহত কে ‘হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু’ বললেন ওসি

ধর্মপাশা- মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১১ মার্চ ২০২৫, ২০:১০
বিএনপির সংঘর্ষে নিহত কে ‘হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু’ বললেন ওসি
ছবি: যায়যায়দিন

সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে মহিষখলায় চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে মোহাম্মদ আলী নামের একজন নিহতের ঘটনাকে ধামাচাঁপা দিতে হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেন মধ্যনগর থানার ওসি মো. সজিব রহমান।

থানার ওসির মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন বেফাঁস বক্তব্য দেয়ায় ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি। ওসি সজিব রহমান ঘটনার পর বলেন, নিহত মোহাম্মদ আলী সংঘর্ষের ঘটনায় নয়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।

সংঘর্ষে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নাকি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে তা ময়নাতদন্তের আগে ওসি কিভাবে বুঝলেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা আমার কথা না, নিহতের পরিবারের লোকজন এমনটি দাবি করছেন।’

সোমবার (১০ মার্চ) গভীর রাতে মধ্যনগর থানার ওসির নিকট সীমান্ত সড়কে চাঁদাবাজি, সংঘর্ষ, পথচারী নিহতের প্রসঙ্গে পুনরায় জানতে চাইলে, ওসি মো. সজীব রহমান সংঘর্ষে দু,গ্রপের কয়েকজন আহত হয়েছেন স্বীকার করলেও সীমান্ত সড়কে চুনাপাথর, কয়লা পরিবাহী গাড়ি আটকে চাঁদা আদায়ের প্রসঙ্গ কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি। পরে বললেন, সীমান্ত সড়কে চাঁদাবাজির সাথে আমার বা থানা পুলিশের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আলী ফরিদ আহমেদ জানান, দুই পক্ষের সংঘর্ষে মোহাম্মদ আলী নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।

একইভাবে সোমবার রাতে নবাগত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহম্মেদ জানান, চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুনেছি একপক্ষ চাঁদা আদায়ের বিপক্ষে ছিলেন। এ নিয়ে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় ঢিলের আঘাতে একজন বয়স্ক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং ১০/১৫ জন আহত হয়েছেন। একজন সহকারী পুলিশ সুপার ও থানার ওসির নেতৃত্বে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।

সংঘর্ষের সময় মহিষখলা বাজারে থাকা একাধিক ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাহিরপুরের বড়ছড়া, চারাগাঁও, বাগলী স্থল শুল্ক স্টেশন থেকে মহিষখলা সীমান্ত সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা চুনাপাথর ও কয়লাবাহী গাড়ি থেকে গত কয়েকমাস ধরে চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হযরত আলী ও হারুনুর রশীদ গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। সোমবার সন্ধ্যায় মহিষখলা বাজারে দুই গ্রুপের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে হযরত আলী গ্রুপের সদস্যরা হারুন গ্রুপের সদস্যদের ধাওয়া করে। প্রথম দফায় ধাওয়ার মুখে হারুন গ্রুপের সদস্যরা পালিয়ে যায়। ইফতারের পর ছাত্রদল নেতা হারুন গ্রুপের শতাধিক নেতাকমীর্ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহিষখলা বাজারে হযরত আলী গ্রুপের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষ চলাকালে বাজারে থাকা উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা পথচারী মোহাম্মদ আলী কোন এক পক্ষের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার মহিষখলা সীমান্ত সড়কে কয়লা-চুনাপাথরবাহী গাড়ি থেকে সড়ক পথ মেরামতের জন্য টাকা উত্তোলনের কথা বলে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বছরের পর বছর চাঁদা আদায় করা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর এই চাঁদা আদায়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা।

অভিযোগ রয়েছে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হযরত আলীর সহোদর সোহেল তার লোকজন দিয়ে ওই সড়কে চাঁদা আদায় করায় করাচ্ছেন । হযরতের অপর সহোদর ভাই সাদ্দাম মহিষখআ সীমান্ত চোরাকারাবারে ঘাট নিয়ন্ত্রক হিসাবে ওসি সজীবের সোর্দ পরিচয়ে চোরাকারবারিদের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে।

বিএনপির দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া বিএনপি নেতা দাবিদার হযরত আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার ভাইয়েরা থানার ওসির সোর্স এর কাজ এবং সড়কে চাঁদাবাজির সাথে সম্পৃক্ত না।

যাযাদি/ এমএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে