গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার বিভিন্ন হাট বাজার ইজারার প্রক্রিয়া বিএনপি সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। ফলে বর্ণিত ইজারা মহালগুলোর কাঙ্খিত মূল্যের অনেক কম হওয়ায় বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাবে সরকার। সেই সঙ্গে সিন্ডিকেট চক্রের মধ্যে মুখোমুখি গন্ডগোলে আতঙ্কিত পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। আগামী সোমবার ২য় ধাপেও দরপত্র দাখিলে হট্রোগোলের আশঙ্কা রয়েছে।
এলাকাবাসী ও পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেনীর পৌর সভা। এই পৌর সভার চলতি বছর ইজারার লক্ষ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০টি দরপত্র আহবান করে। ১৪৩২ সনের পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০শে চৈত্র পর্যন্ত এক বছর মেয়াদের জন্য সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে দরপত্র আহবান করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিগত তিন বছরের ইজারার গড় মুল্যের সহিত ৬% যোগ করে কাঙ্খিত মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী এবারও কাঙ্খিত মূল্য নির্ধারণ করে দরপত্র আহবান করা হয়।
এ লক্ষ্যে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিক ও একটি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় কালিয়াকৈর পৌরসভা। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গত ৬ মার্চ ১ম ধাপে দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন পত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির একাধিক গ্রুপ পৌরসভার সামনে ধাক্কাধক্কিসহ হট্রোগোল করে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ইজারা মহাল ঘিরে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কাঙ্খিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্য দাখিল করেন দরদাতারা।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কালিয়াকৈর হাট-বাজার সম্ভাব্য ইজারা মূল্যে ৩১ লক্ষ ২৮ হাজার ৭৭০ টাকার বিপরিতে মাত্র ১২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা, কালিয়াকৈর মাছের আড়ৎ ৩৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ১০০ টাকার বিপরীতে মাত্র ১২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, কালিয়াকৈর পৌর টার্মিনাল ২৭ লক্ষ ২০ হাজার ৬৭০ টাকার বিপরীতে মাত্র ২ লক্ষ টাকা, চন্দ্রা টার্মিনাল ৩ লক্ষ ১৮ হাজার টাকার বিপরীতে ১ লক্ষ টাকা, কালিয়াকৈর পৌর বাস টার্মিনাল পাবলিক টয়লেট ৬ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৭৫ টাকার বিপরীতে মাত্র ৩ লক্ষ টাকা মূল্য দাখিল করে সিন্ডিকেট চক্র। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ১ম ধাপে ইজারা মহালের কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়ায় আগামী ১৭ মার্চ ২য় ধাপে দরপত্র দাখিলের দিন ধার্য করে পৌরসভা। ২য় ধাপেও ইজারা মহালের কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়া গেলে আগামী ২৭ মার্চ ৩য় ধাপে দরপত্র দাখিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও কালিয়াকৈর পৌরসভায় দরপত্র দাখিল করা যাবে।
যদিও কালিয়াকৈর পৌরসভার ২য় ধাপে দরপত্র বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা যায়, গড় মূল্যের চেয়ে দাখিলকৃত মহালগুলোর অনুকুলে ইতিমধ্যে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বিএনপির নেতাকর্মীসহ অন্যান্য চক্র সিন্ডিকেট মাধ্যমে ডামি দরদাতা, সিডিউল ক্রয়ে বাঁধা, ক্রয়কৃত সিডিউল ছিনিয়ে নেওয়া, এমন কি প্রতিপক্ষকে নির্ধারিত দরপত্র দাখিলে বাঁধা প্রদান করে। সিন্ডিকেট চক্রকে মদদ দিচ্ছেন এখানকার বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তবে সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় থাকলে আগামী সোমবারও দরপত্র দাখিলেও একই ধরণের হট্রোগোল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কম হবে বলেও মন্তব্য সচেতন মহলের।
বঙ্গবন্ধু কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক হানিফ খান বলেন, ঐদিন আমাদের সঙ্গে আরিফ ভাইয়ের কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে কালিয়াকৈর পৌর সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য আরিফ হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও ধরেননি।
চাপাইর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, শিডিউল কিনেছিল। কিন্তু ১ম ধাপে নিজেদের মধ্যে হট্রোগোলের পর নেতারা শিডিউল জমা দিতে দেয়নি। একটা মিটিং করে জলিল সাহেবের কাছে শিডিউল জমা দেওয়া হয়েছে। পরে নেতাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অগ্রসব হবো। আর এভাবে টেন্ডার হলে সরকার রাজস্ব হারাবে। এখানে আমাদের কি করার আছে? আমজাদ হোসেন বলেন, আমার নাম দিয়ে শিডিউল কেনা হয়েছে। কিন্তু আমি তা জানতাম না। রাজীব হোসেন বলেন, দুটি শিডিউল কিনলেও বাঁধা দেওয়ায় সেটা আর জমা দেয়নি। তবে জলিল সাহেব সমঝোতার জন্য ডাকছিল। তবে শিডিউল জমা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে গাজীপুর জেলা ট্রাক ও মিনি ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি জালিল উদ্দিন জানান, এমন হলে আপনাদের জানাবো। আর ওই বিষয়ে আমাদের মিটিং আছে বলেও জানান তিনি।
কালিয়াকৈর পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ জানান, তিন বছরের ইজারামূল্য গড় করে ইজারা দর নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কাঙ্খিত মূল্য না পেয়ে আমরা রিটেন্ডার দিয়েছি। রিটেন্ডারে যিনি সর্বোচ্চ ডাক দিবেন তাকে ইজারা দেওয়া হবে। কিন্তু সিন্ডিকেট করে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা ঠিক হবে না। আমরা সরকারের ক্ষতি চাই না। এজন্য বিধি মোতাবেক কাজ করবো। তবে সবাইকে নিয়ম অনুযায়ী সুন্দরভাবে ইজারা নেওয়ার জন্য আহব্বান করছি।
যাযাদি/ এমএস