সারাদেশ

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচার যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রায় দুই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বারুনী স্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। যথারীতি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাজার-হাজার পূণ্যার্থী নারী-পুরুষ এ স্নানোৎসবে অংশ নেন। শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদ ও বন্দর ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতি এ উৎসব পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফন্ট, শিবালয় সার্বজনীন মন্দির কমিটি, শিবালয় বন্দর ব্যাবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতি এ উৎসব এবং মেলায় সার্বিকভাবে সহায়তা করছে।

এদিকে, এ স্নানোৎসবকে ঘিরে শুক্রবার থেকে ৩ দিনব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে। প্রতিবছর ৩ দিনব্যাপী এ মেলা হওয়ার কথা থাকলেও আবহাওয়া ও সার্বিক পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে সাতদিন পর্যন্ত মেলা চলতে থাকে। এবারও অনুকুল পরিবেশ থাকলে মেলা সাতদিন চলবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

জানা গেছে, আরিচা ঘাটের এ বারুনী স্নান প্রায় ২শ’ বছরের ঐতিহ্য। এ মেলায় ভারতের কলকাতা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, পাবনা, ফরিদপুরসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে পূণ্যার্থীরা মহাবারুনী গঙ্গা স্নানে আসেন।

বৃহস্পতিবার আরিচা ঘাট এলাকা সরেজমিন মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বারুনীর স্নানকে ঘিরে আরিচার যমুনা নদীর তীরে বসা ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় হ্যান্ডিক্রাফট, খেলনা, প্রসাধনী, সাজ-সজ্জার নানা দোকান, কাঠ, বেত, মাটি, লোহার তৈরী আসবাবপত্রসহ গৃহকাজে ব্যবহার্য্য সামগ্রীর দোকান, মিষ্টি, বিন্নি, খৈই, আখড়া, সাজ, বাতাসাসহ নানা ধরনের খাদ্য সামগ্রীর দোকান বসেছে।

স্নান করতে আসা শুভ সরকার বলেন, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি এই স্নানের মাধ্যমে পাপ মোচন হয়। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে স্নান করতে এসেছি।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট উপজেলা শাখার সভাপতি নিখিল মালো বলেন, শত-শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বারুনির স্নানে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে পূণ্যার্থীরা শুদ্ধি লাভের আশায় স্নানে অংশগ্রহণ করছেন । এই স্নানের মাধ্যমে দীর্ঘ দিনের পাপ মোচন হয়। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে।

শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাজু হোসেন বলেন, প্রায় দু’শ বছর ধরে এ বারুনী স্নান ও মেলা আরিচায় যমুনার তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ উৎসব হিন্দু ধর্মালম্বীদের হলেও মেলাকে ঘিরে হিন্দু-মুসলমানদের সোহার্দ্যপূর্ণ মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। আগত পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের বন্দর সমিতি, ইউনিয়ন পরিষদ, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, স্নান করতে আসা প্রত্যেক পূণ্যার্থীদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে। দুর-দুরান্ত থেকে আসা পূর্ণ্যার্থীদের জন্য পোশাক বদলানোসহ সকল ধরণের সুব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, মহাবারুনী স্নান উপলক্ষে আরিচার যমুনার পাড়ে স্নান ও মেলায় আগত পূণ্যার্থী, দর্শনার্থী ও দোকানীদের জন্য বন্দর সমিতির পক্ষ থেকে পাহারাদার ও চকিদার দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, শিবালয় থানা পুলিশ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশও সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। সকলের সার্বিক সহযোগীতায় আমরা এ ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো: আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, আমাদের শিবালয়ে প্রায় ২শ’ বছরের ঐতিহ্য এ বারুণী গঙ্গা স্নান।এ স্নান সনাতন ধর্মালম্বীরা উদযাপন করে থাকে। আমরা শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদ ও বন্দর ব্যাবসায়ী সমিতি’র পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগীতা করে থাকি।

একইভাবে এবারও সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে বন্দর সমিতিকে কিছু অনুদান দিবো। মেলায় আগত কোন দোকানদারের নিকট হতে খাজনার নামে কোন ধরনের চাদাবাজি মেনে নেয়া হবে না বলে তিনি ঘোষণা দেন। এবারের স্নান ভালভাবে হয়েছে। আর মেলাও সুন্দর ও সফলভাবে হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

যাযাদি/ এমএস