বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

ঈদের আগের দিন শতাধিক বসতঘর ভেঙে দিল বনবিভাগ

কালিয়াকৈর, (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৮:৫৮
ঈদের আগের দিন শতাধিক বসতঘর ভেঙে দিল বনবিভাগ
যায়যায়দিন

চারিদিকে কান্নার রোল। এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। মানুষ কতটা নির্মম করে এমনটা করতে পারে।আজ রমযানের শেষ দিন কাল ভোর হলেই ঈদ। কেউ সেমাই চিনি পোলাউয়ের চাউল সহ অন্যান্য সামগ্রিক ক্রয় করে পরিবারের লোকজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করবে এমন আশা নিয়ে রমজানের শেষ রোজা রেখেছিলেন।

কিন্তু মানুষ কতটা নির্মম হলে ঈদের আগের দিন এমনিভাবে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সিনাবহ খন্দকার পাড়া এলাকায় বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান মানুষ কখনো ভাবতেই পারেনি। পাকিস্তানের সৈনিকেরা রাতের আধারে বাংলার মানুষের উপরে ঝাপিয়ে পড়েছিল । কিন্তু ঢাকা বন বিভাগের লোকজন রোববার সকাল ৯টা থেকে উপজেলার স সিনাবহ এলাকায় অভিযান চালিয়ে শতাধিক বাড়ি ঘর ভেঙে চুরমার করে দেয়। চারিদিকে কান্নার হাহাকার কেউ বাড়ির ঘরের ভিতর থেকে আসবাবপত্র পর্যন্ত বের করতে পারেনি। ঘরের ভিতরে সমস্ত মালামালসহ ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ যেন ৭১ কেউ হার মানিয়েছে।

যাদের বাড়ি ঘর ভাঙ্গা হয়েছে এমন একজন জানায় গতকাল শনিবার বিকেলে মাইকিং করেছে এ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে ভোর হওয়ার সাথে সাথেই বন বিভাগের লোকজন পুলিশ রেব, আনসার ,আর্মিসহ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। কাল ঈদ আমাদের ঘরে একমুঠো চাল নেই।যে বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের রান্না করে তাদের মুখে একমুঠো ভাত উঠিয়ে দিব। আমরা যারা বোনের জমিতে বাড়ি বানিয়েছি এখানে আমাদের শতবছরের পুরানো ঘর বাড়িসহ পুরাতন ঘরবাড়ি রয়েছে। সব ঘরবাড়ি তারা ভেঙে দিয়েছে আমরা খোলা আকাশের নিচে ছাড়া আমাদের আর কোন থাকার জায়গা নেই।

আমাদের কথা হল আমরা যেহেতু বনের জমিতে আমাদের পূর্বপুরুষরা বাড়ি বানিয়েছে অভিযান পরিচালনা করবে কমপক্ষে আমাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় দিলে সরকারের এমন কি ক্ষতি হতো?

এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বন বিভাগের ডিএফও মোঃ বশিরুল আলম্, এসিএফ শামসুল আরেফিন,, কালিয়াকৈর শহিদুল ইসলাম শাকিল, কাচিঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান আলী, কালিয়াকৈর ও কাচিঘারেঞ্জের বিভিন্ন বিট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

বনবিভাগ সুত্র জানায়, চন্দ্রা রেঞ্জের আওতাধীন সিনাবাহ এলাকায় অবৈধ দখলদারদেরকে সড়ে যাবার জন্য শনিবার নোটিশ দিয়ে মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সকালে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর দিকে ওই এলাকায় লোকজন বাধা প্রদান করে। এক পর্যায়ে দখলদার এলাকাবাসী ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।এ সময় বনকর্মীরা কয়েকজনকে আটক করে পরে ছেড়ে দেয়। ৪টি বুলডোজার দিয়ে শতাধিক ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাগাম্বর এলাকার কালাম জানান, ১০/১২ বছর আগে আমরা এখানে বাড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছি আজকে ঈদের আগের দিন হঠাৎ করে বন বিভাগের লোকজন নির্মমভাবে আমাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল আমরা এখন যাব কোথায়?

একে এলাকার আসমা বেগম বলেন আমরা ঘর বাড়ি করার সময় বন বিভাগের লোকদের সাথে আলোচনা করেই ঘর তৈরি করেছি আজকে হঠাৎ আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে ঈদের আনন্দ কেড়ে নিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বনভূমি দখল ও গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বন বিভাগ জানিয়েছে, দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বনভূমি পুনরুদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।

এ ব্যাপারে চন্দ্রা রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান সরকারের নির্দেশক্রমে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে তবে ঈদের একদিন আগে এই অভিযান করা সঠিক হয়নি। আমরা ঈদের পরে আবারো অভিযান পরিচালনা করবো।

তার অফিসের লোকজনদেরকে টাকা দিয়েই বনের জমিতে নতুন নতুন ঘর তৈরি করা হচ্ছে সাংবাদিকদের এমন তাকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে বলেন তারা নিতে পারে আমি তো টাকা নেইনি।

ওই এলাকার আব্দুল জলিল জানান আমার বাড়িটি একশত বছরেরও পুরাতন বাড়ি ।আমার জমির কাগজপত্র সব সঠিক রয়েছে তারা আমার কাগজপত্র না দেখেই বাড়িঘর ভেঙ্গে দিয়েছে।

ঘটনা স্থলে এমন অনেক বাড়ির মালিককে দেখা গেছে তাদের বাড়ির জমির কাগজপত্র নিয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তার পিছনে পিছনে ঘুরছে কিন্তু রেঞ্জ কর্মকর্তা তাদেরকে কোন পাত্তাই দিচ্ছেন না।

তিনি জানান তার বাড়ি ভাঙচুরের সময় তার বাড়ির এক মহিলাকে বন বিভাগের লোকজন নির্মমভাবে টেনে হিঁচড়ে ধরে নিয়ে যায়। পরে এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে বন বিভাগের এফডিএম অর্থাৎ নৌ চালক মিনহাজির উপর আক্রমণ করে। এতে তার মাথা ফেটে যায় বন বিভাগের অন্যান্য লোকজন তাকে উদ্ধার করে থামিয়ে হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

এলাকার সুধীজন এর জানান সরকারের জমি সরকার উদ্ধার করবে এটা সঠিক কিন্তু আজ রমজানের শেষ দিন কাল সকালে ঈদ। ঈদের আগের দিন এই উচ্ছেদ অভিযান না চালিয়ে কয়েক দিন আগে কিংবা ঈদের কিছুদিন পরে করলে সরকারের কি এমন ক্ষতি হতো? এটা ৭১ বা ২৪ এর ধ্বংসযজ্ঞ কেউ হার মানিয়েছে। এমন বেদনাদায়ক ঘটনা জনসাধারণের কাম্য হতে পারে না।

যাযাদি/ এমএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে