তিনদিন ধরে খোলা আকাশের নীচে রাত্রিযাপন করছে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সিনাবহ এলাকায়। সোমবার ঈদের আগের দিন বনবিভাগের লোকজন ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছেন। এ সময় ওই এলাকার প্রায় তিনশতাধিক বাড়িঘরসহ দোকানপাট বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়।
ঘরবাড়ি হারিয়ে তিনদিন ধরে খোলা আকাশের নীচে রাত্রিযাপন করছে তারা।অভিযানকালে চারিদিকে কান্নার রুল পড়ে যায়। সৃষ্টি হয় এক হৃদয় বিদারক ঘটনার। মানুষ কতটা নির্মম হলে এমনটা করতে পারে। ভোর হলেই ঈদ। কেউ সেমাই চিনি পলাউর চাউলসহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় করে পরিবারের লোকজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করবে এমন আশা নিয়ে রমজানের শেষ রোজা রেখে ছিলেন। ঈদের আগের দিন বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান চালাবে মানুষ কখনো ভাবতেই পারেনি।
বাড়িঘর হারানো লোকজন সুত্রে জানাগেছে রোববার সকাল ৯টা থেকে উপজেলার সিনাবহ এলাকায় বনের লোকজন অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক ঘরবাড়ীসহ দোকানপাট ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। কেউ ঘরের ভিতর থাকা আসবাবপত্র পর্যন্ত বের করতে পারেনি। ঘরের ভিতরে সমস্ত মালামালসহ ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
এছাড়াও তারা জানায় শনিবার বিকেলে মাইকিং করেছে এ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে রোববার ভোর হওয়ার সাথে সাথেই বন বিভাগের লোকজন পুলিশ র্যাব,বিজিবি, আনসার ,আর্মির যৌথ বাহিনীর সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে । আমাদের ঘরে একমুঠো চাল নেই যে, ঈদের দিন বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের রান্না করে তাদের মুখে একমুঠো ভাত উঠিয়ে দিবো। এখানে আমাদের শতবছরের পুরানো ঘর বাড়ি রয়েছে।
যেহেতু বনের জমিতে আমাদের পূর্বপুরুষরা বাড়ি বানিয়েছে অভিযান পরিচালনা করবে কমপক্ষে আমাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় দিলে সরকারের এমন কি ক্ষতি হতো? রোহিঙ্গারা যদি এদেশে বসবাসের জন্য স্থান পায় তাহলে আমরা কেন বসবাসের জন্য স্থান পাবো না?বনবিভাগ সুত্র জানায়, কালিয়াকৈর চন্দ্রা রেঞ্জের সিনাবহ এলাকায় অবৈধ দখলদারদেরকে সড়ে যাবার জন্য শনিবার বিকেলে মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সরে যায়নি। সকালে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর দিকে ওই এলাকায় লোকজন বাধা প্রদান করে এবং এক পর্যায়ে জবরদখল কারীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় বনকর্মীরা কয়েকজনকে আটক করে পরে ছেড়ে দেয়। ৪টি বুলডোজার দিয়ে বাজারের দোকানসহ দুই শতাধিক ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
বাগাম্বর এলাকার কালাম জানান, ১০/১২ বছর আগে আমরা এখানে বাড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছি ঈদের আগের দিন হঠাৎ করে বন বিভাগের লোকজন নির্মমভাবে আমাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলো আমরা এখন যাব কোথায়? এছাড়াও জুয়েল (৪৫) নামের এক ব্যাক্তির পা ভেঙ্গে দেয় ফরেষ্টের লোকজন।
এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর চন্দ্রা রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান সরকারের নির্দেশক্রমে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে তবে ঈদের একদিন আগে এই অভিযান করা সঠিক হয়নি। উর্ধবতন কর্তৃপক্ষ যা বলবে সে অনুসারে আমাদের কাজ করতে হয়।আমরা ঈদের পরে আবারো অভিযান পরিচালনা করবো। তার অফিসের লোকজনদেরকে টাকা দিয়েই বনের জমিতে নতুন ঘর করেছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে বলেন তারা নিতে পারে আমিতো টাকা নেইনি।
ওই এলাকার আব্দুল জলিল(৭৫) জানান আমার বাড়িটি একশত বছরেরও পুরাতন বাড়ি। আমার জমির কাগজপত্র সব সঠিক রয়েছে । আমি তাদের কাগজ দেখাতে গেলে তারা লাঠি দিয়ে বারি মেরে আমার হাত ভাঙ্গাসহ বাড়িঘরও ভেঙ্গে দিয়েছে।
ঘটনা স্থলে এমন অনেক বাড়ির মালিককে দেখা গেছে তাদের বাড়ির জমির কাগজপত্র নিয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তার পিছনে পিছনে ঘুরছে কিন্তু রেঞ্জ কর্মকর্তা তাদেরকে কোন পাত্তাই দিচ্ছেন না। তিনি জানান তার বাড়ি ভাঙচুরের সময় তার বাড়ির এক মহিলাকে বন বিভাগের লোকজন নির্মমভাবে টেনে হিঁচড়ে ধরে নিয়ে যায়। পরে এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে বন বিভাগের এফডিএম অর্থাৎ নৌ-চালক মিনহাজের উপর আক্রমণ করে। এতে তার মাথা ফেটে যায় বন বিভাগের অন্যান্য লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
তবে ওই এলাকার স্থানীয় ওয়াসীম তাৎক্ষণিক যদি এলাকাবাসীকে না ফেরাত তাহলে ওখানে ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঘটার সম্ভাবনা ছিল। এলাকার সুধীজন এর জানান সরকারের জমি সরকার উদ্ধার করবে এটা সঠিক কিন্তু ঈদের আগের দিন এই উচ্ছেদ অভিযান না চালিয়ে কয়েক দিন আগে কিংবা ঈদের কিছুদিন পরে করলে সরকারের কি এমন ক্ষতি হতো?
এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বন বিভাগের ডিএফও মোঃ বশিরুল আলম্, এসিএফ শামসুল আরেফিন, কালিয়াকৈর ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম শাকিল, কাচিঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান আলী, কালিয়াকৈর ও কাচিঘারেঞ্জের বিভিন্ন বিট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
এ সময় গৃহহীন পরিবারের পাশে দাঁড়ান গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌর যুব দলের সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক সাইজুদ্দিন আহাম্মেদ। তিনি তার পক্ষ থেকে গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন।
যাযাদি/ এমএস