জয়পুরহাটে সরিষাগাড়ি নামক একটি পুকুরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সকালে দলবেঁধে মাছ লুট করতে নেমে সন্ধ্যায় লাশ হয়ে ফিরলেন মনোয়ার হোসেন (৩২) নামের এক যুবক। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) জেলার কালাই উপজেলার পুনট-পূর্বপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে যুবকের এ মৃত্যু স্বাভাবিক নাকি এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- তা নিয়ে প্রশ্নও উঠছে জনমনে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় যুবকটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে যেতে চান পুলিশ। কিন্তু নিহতের স্বজন এবং এলাকাবাসী এ কাজে বাঁধা দেন। ফলে রাতেই স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে সেখান থেকে ফিরে যান পুলিশ। যদিও এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই কালাই থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ।
নিহত মনোয়ার হোসেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট-পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আফতাব আলীর ছেলে।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মনোয়ার হোসেনের স্বজন এবং স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি জাহিদ হোসেন জানান, কালাই উপজেলার পুনট-পূর্বপাড়া গ্রামের সরিষাগাড়ি নামে একটি সরকারি (খাস) পুকুর ওই গ্রামেরই আওয়ামী লীগের একজন লোক চাষ করতেন।
শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে ওই পুকুরে স্থানীয় কিছু লোকজনের সঙ্গে মনোয়ার হোসেনও মাছ ধরতে নামেন। মাছ ধরা শেষে অন্যান্যরা পুকুর থেকে উঠে বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু মনোয়ার হোসেন একাই ওই পুকুরে মাছ ধরতেই থাকেন। এদিকে, বাড়িতে না ফেরায় মনোয়ার হোসেনকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন তাঁর মা। খুঁজতে খুঁজতে তিনি ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই পুকুরে আসেন। তিনি পুকুরটির উত্তর-পশ্চিম দিকের কোণে একটি বাঁশ ঝাড়ের নিচের গর্তে মনোয়ার হোসেনকে ভাসতে দেখেন।
খবরটি তিনি স্থানীয় লোকজনকে জানান। এরপর লোকজন ঘটনাটি পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থল থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় মনোয়ার হোসেনের লাশটি উদ্ধার করে। এরপর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সে সময় লাশের মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে দেখা যায়। কিন্তু মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি। অতঃপর ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি থানায় আনতে চাইলে, নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের প্রবল আপত্তির মুখে পড়ে পুলিশ। সে সময় পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই তাঁদের। অবস্থা বেগতিক দেখে ময়না তদন্ত ছাড়াই মরদেহটি নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে ওই ঘটনায় শুক্রবার রাতেই কালাই থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা (ইউডি মামলা) দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন লোক জানান, দামগাড়ি নামের ওই সরকারি (খাস) পুকুরে শুক্রবার মাছ লুটের ঘটনাটি উপজেলা বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় একজন নেতার ছত্রছায়ায় হয়েছে। পুকুরটি ওই গ্রামেরই আওয়ামী লীগের যে ব্যক্তি চাষ করতেন, তাঁর সঙ্গে ওই উপজেলা বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল। আওয়ামী লীগের ওই ব্যক্তিকে ফাঁসানোর জন্য মনোয়ার হোসেনকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁদের ধারণা।
কিন্তু এ বিষয়ে সুবিধা করতে না পারায়, মনোয়ার হোসেনের গরীব পরিবরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বা অর্থের লোভ দেখিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও পুনটে বিএনপির দলীয় তিনটি গ্রুপিংয়ের জেরেও এ ঘটনা ঘটতে পারে এমন মন্তব্যও তাঁদের। তবে যাইহোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবিও জানান তাঁরা।
যাযাদি/ এমএস