বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকবে বঙ্গোপসাগরের ভারতের জলসীমায়ও। এ ক্ষেত্রে ভারতের নিষেধাজ্ঞো বলবৎ থাকার দুদিন আগে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাবে। মন্ত্রণালয়ের সামুদ্রিক মৎস্য-২ শাখার উপসচিব এইচ এম খালিদ ইফতেখার রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।
৫৮ দিন গভীর সমুদ্রগামী ফিশিং ভ্যাসেল এর সাথে উপকূলীয় ইলিশ শিকারী ইঞ্জিন চালিত কাঠের ট্রলারে অবরোধ দেয়ায় বেকার হয়ে পরেছে বরগুনা সহ দক্ষিণ অঞ্চলের কয়েক লাখ জেলে। তবে ভারতীয়দের সাথে মিলিয়ে অবরোধ দেয়ায় খুশি উপকূলীয় জেলেরা।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিলের দুই মাসের অভয়ারণ্যের নিষেধাজ্ঞা এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, সব মিলিয়ে বছরে ১৪৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হয় তাঁদের। এখন তা আট দিন কমে গেল।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতি মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এর সাথে আমরা বৈঠক করেছি। তখন আমরা তাকে বিষয়টি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা শুরু থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করে আসছিলাম। কারণ, এতে সাগর-নদী মাছশূন্য হয়ে পড়েছিল। জেলেরা খুব কষ্টে আছেন। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও ধ্বংস হওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছিল। দীর্ঘদিন পর হলেও এই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা খুব খুশি।
মোস্তফা চৌধুরী বলেন, এর আগে বাংলাদেশের জলসীমায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রায় ৩৯ দিন ভারতীয় জেলেরা মাছ এ দেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যেত। এখন সেই সুযোগ আর থাকবে না।
জেলে নেতারা বলেন, গত আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ফলে সুযোগ দেওয়া হয়েছে ভারতীয় জেলেদের। পাঁচ মাস ইলিশ মৌসুমের তিন মাস নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশীয় জেলেদের ইলিশ শিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো।
তারা বলেন, ২০১৯ সাল থেকে এই অধ্যাদেশের আলোকে বাংলাদেশের জেলেদের জুলুম অত্যাচার করা হচ্ছে। ভারতীয়রা বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে সকল ধরনের মাছ শিকার করে নিয়ে গিয়ে যেতো। এছাড়াও বাংলাদেশী জেলেদের নির্যাতন সহ মাছ লুট করে নিয়ে যায়। এই সময় বাংলাদেশের জেলেরা আর্থিক সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়তো।
জানা গেছে, জেলা মৎস্য অফিসের তৈরি করা তালিকায় বরগুনায় নিবন্ধিত জেলে অর্ধ লক্ষাধিক। এর পাথরঘাটা হচ্ছে ১৬ হাজার ৮১১ জেলে। এছাড়াও আরো কয়েক হাজার অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে উপকূলীয় এ এলাকায়।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুম জানান, ইতিমধ্যে সাগর থেকে জেলেরা ফিরতে শুরু করেছে। এবারের অবরোধ সফল করতে সকল জেলেরা সরকারকে সহযোগিতা করবেন।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খান জানান জানান, ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এই নিষিদ্ধ সময়ে যাতে করে সমুদ্রগামী কোন নৌযান মাছ শিকারে যেতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পাথরঘাটা স্টেশনকে বিষখালী নদী ও নৌ পুলিশ ফাঁড়ি চরদুয়ানিকে বলেশ্বর নদীর মোহনায় চেকপোস্ট স্থাপন করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধের কারণে যাতে সাধারণ মাঝি-মাল্লারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে সরকারের নজর রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম।
তিনি জানান ক্ষতিগ্রস্ত মাঝি-মাল্লাদের পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় আনা হবে। যে কার্ডের মাধ্যমে তাঁরা সরকারের কাছ থেকে রেশনিং সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া নানা সহায়তা দেওয়া হতে পারে। যাতে তাঁরা মাছ ধরতে না গিয়ে সাগরের মৎস্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করেন।
যাযাদি/ এমএস