সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

কোম্পানীগঞ্জে জনবসতি এলাকায় চলছে আ.লীগ নেতার ইটভাটা

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী
  ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৪৪
কোম্পানীগঞ্জে জনবসতি এলাকায় চলছে আ.লীগ নেতার ইটভাটা
ছবি: যায়যায়দিন

নোয়াখালীর কোম্পানী গঞ্জ উপজেলার রামপুরে বসতি এলাকায় বেআইনীভবে গড়ে ওঠা একটি ইটভাটায় পরিবেশ দূষণের অভিযোগ উঠেছে। মেসার্স বামনী ব্রিকস ম্যাুংফ্যাকচারিং কোম্পানী নামের ইটভাটাটির মালিক ছিদ্দিক উল্যাহ ভুট্রু কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

ভাটাটিকে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হলেও প্রশাসন ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে ইট ভাটার চিমনি থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আশপাশের লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য রামপুরে বসতি এলাকায় ৩৫০টি পরিবার বসবাস করে। এলাকাটিতে রয়েছে নানা জাতের অসংখ্য গাছপালা, কৃষিজমি, চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি মসজিদ। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অমান্য করে এলাকাটিতে প্রায় দুই একর জায়গার ওপর ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ছিদ্দিক উল্যাহ ভুট্রু ইটভাটা নির্মাণ করেন। তিনি এলাকায় কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এ সময় অবৈধ ইটভাটাটি বন্ধে স্থানীয় বাসিন্দা ইসমত আরা রুমা, আবু নাছের, লাল মিয়া ও মো.সেলিম জেলা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। পরে এ বিষয়ে তারা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করলেও কাদের মির্জার চাপে তা তুলে নিতে বাধ্য হন।

৫ আগষ্টের পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম এ বছর বিষয়টি নিয়ে পুনরায় রিট পিটিশন দায়ের করলে হাইকোর্ট বামনী ব্রিকস ম্যাুংফ্যাকচারিং কোম্পানীকে দুই মাসের মধ্যে ভাটার কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধের নির্দেশ দেন।

সরেজমিন ইটভাটায় দেখা যায় উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে ভাটায় যথারীতি কৃষিজমির মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। বসতবাড়ির আশপাশে নির্মাণ করা হয়েছে ভাটার চিমনি। ইট বানাতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো.সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ভুট্রুর ইটভাটার কোন পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। অবৈধ এ ইটভাটা বন্ধে ২০১৭ সালে আমি হাইকোর্টে রিট পিটিশন করি। তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আব্দুল কাদের মির্জার হুমকিতে আমি ওই রিট পিটিশন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হই। না হলে মির্জা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলতেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানোর কারণে সৃষ্ট ধোঁয়া ও ছাই পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন বয়সী মানুষ সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। ভাটা এলাকার আশপাশের গাছের ফলমূল সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স বামনী ব্রিকস ম্যাুংফ্যাকচারিং কোম্পানী মালিক ছিদ্দিক উল্যাহ ভুট্রু বলেন, আদালতের স্টে অর্ডারের বিষয়টি শুনেছি। আমার ইটভাটার প্রথমে পরিবেশ ছাড়পত্র ছিল। পরে আর নবায়ন দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এজন্য জেলা প্রশাসকের অনুমোদনও হয়নি। তখন পরিবেশ বলছে আপনারা চালান আমরা কিছু বলব না।

নোয়াখালী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মিহির লাল সরদার বলেন, উনাদের অবস্থানগত ছাত্রপত্র আছে। পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অন্য যেসব সমস্যা রয়েছে এজন্য কিছু দিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাযাদি/ এমএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে