যশোরের রূপদিয়ায় হামলা ও তান্ডবের শিকার ১৪ পরিবারের বাড়িঘর পরিদর্শন করেছেন বিএনপি ও জামায়াত নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল সকালে রূপদিয়া মধ্যপাড়া এলাকায় এই তাÐবের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জামায়াতের পরিচয় বহনকারী ৬০/৭০জন একযোগে হামলা চালিয়ে তাদের বাস্তুচ্যুত করেছে। এমনকি ফের হামলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। তারা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ বলছে, আসামিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে তারা।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর সদরের রূপদিয়া মধ্যপাড়ার ৫০ বছরেরও বেশিসময় ধরে বসবাস করছেন বাস্তুহীন ১৪টি পরিবার। জমির মূল মালিক সাঈদ বক্স তাদের আশ্রয় দেন। তার মৃত্যুর পর জামায়াত নেতা খবির খাঁ ও তার অনুসারীরা জমিটি নিজেদের দাবি করে দখল নেয়ার চেষ্টা করছিলো। মামলা করেও তারা ব্যর্থ হয়। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে জমি দখল নিতে হুমকি ধামকি শুরু করে তারা।
সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল সকালে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ৬০/৭০জনের একটি সশস্ত্র দল হামলা চালিয়ে ১৪টি বাড়ি ভাংচুর করে। এসময় বাড়িতে যে থাকা নারী পুরুষদের মারপিট করে। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ তাদের বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। খবর পেয়ে পুলিশ আসলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। যে কারণে ফের হামলার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এদিকে, এই হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী ইজিবাইক চালক মিলন হোসেন বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতেই যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে রূপদিয়ার খবির খাঁ, জাহিদ আলী, রমজান আলী, সাদ্দাম হোসেন, জুবায়ের হোসেন, আসলামসহ অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনকে এই হামলার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ইজিচালক মিলন হোসেন বলেন, হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে তার এক লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার স্ত্রী সালমা খাতুনের ঘর থেকে ৭০ হাজার টাকার স্বর্ণের দুল নিয়ে যায়। রাজিয়ার ঘর থেকে এক লাখ ৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের গহনা, ইসমাইলের ঘর থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা, প্রিয়ার ঘর থেকে স্বর্ণের এক জোড়া কানের দুল, আনসারের ঘর থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা, মিলনের ঘর থেকে ৪০ হাজার টাকা লুট করে হামলাকারীরা। এছাড়া সিদ্দিকের বাড়ির আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ ভাংচুর করে ৫ লাখ টাকার ক্ষতি এবং নগদ ৩৫ হাজার টাকা লুট করে তারা। হামলাকারীদের এলোপাতাড়ি মারপিটে আনসার, সুফিয়া, রাজিয়া, জানু, পারভীন ও সালমা বেগম জখম হন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচিত স্থানীয় প্রভাবশালী খবির খাঁ ও তার লোকজন এখনও তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলছেন। না হলে তাদের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। যে কোন সময় আবারও হামলার শিকার হতে পারেন বলে আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন তারা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত সোমবার দুপুরে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকনের নেতৃত্বে বিএনপির একটি টিম ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য ও নগদ টাকা সহায়তা প্রদান করেন। হামলার শিকার হওয়া পরিবাগুলো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন এবং আতংকে বসবাস করছেন।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় ভুক্তভোগীরা নেতাকর্মীদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সুষ্ঠু বিচার ও পুনর্বাসনে সব ধরণের সহযোগী করা হবে উল্লেখ করে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। এখানে যা হয়েছে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ। ঘটনার পরপরই ইউনিয়ন বিএনপি, সদর উপজেলা বিএনপি ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সাহায্য সহযোগিতা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আবার এসেছি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত, ভুক্তভোগী তারা বলছে, হামলাকারীরা জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কোন রাজনৈতিক সংগঠন এমন দুর্বৃত্তদের দায় নেওয়ার কথা নয়। যারা এই কাজটি করেছে, তারা দুর্বৃত্ত, তারা সমাজে অনাচার সৃষ্টি করছে। আইনশৃংখলা বাহিনী দুর্বৃত্ত পরিচয়ই বিবেচনা করবে। জামায়াতে ইসলামী যদি এই দুর্বৃত্তদের দায়িত্ব নেয়, তাহলে বিএনপি রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবেলা করবে।’
এর আগে মঙ্গলবার সকালে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম রসূলের নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘এখানে যারা হামলা করেছে তারা দুর্বৃত্ত। দখলের নামে যারা হামলা চালিয়েছে; তারা অপরাধী। নিন্দা জানাচ্ছি। আসলে এই হামলার সঙ্গে জামায়াতকে দোষারোপ করা হচ্ছে; এটা ভুল। সুবিধাবাদী গোষ্ঠি এটাকে রাজনীতিক রঙ লাগিয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘হামলার পরে আমরাও কয়েকবার ঘটনাস্থলে গিয়েছি। একটি মামলা করেছে ভুক্তভোগীরা। বিষয়টি তদন্ত চলছে।’
এদিকে, গত ১৪ এপ্রিল যায়যায়দিন পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ‘যশোরে ১৪টি বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ জামায়াতের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত। যশোর জেলা জামায়াতের জেলা প্রচার সেক্রেটারি মুহাম্মদ শাহাবুদ্দীন বিশ্বাস এক প্রতিবাদলিপিতে জানিয়েছেন, সংবাদটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বাড়ি-ঘর ভাংচুর ঘটনার দায়ী খবির খান জামায়াতের কোন কর্মী বা নেতা নন। এ ঘটনাটি খবির খানের ব্যক্তিগত জমি-জায়গা সংক্রান্ত ও পারিবারিক বিষয়।
এর সাথে জামায়াতের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। বাড়ি-ঘর ভাংচুরের ঘটনা জানতে পেরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা শাখার আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আবু আফর সিদ্দীকী, সহকারী সেক্রেটারি গোলাম কুদ্দস, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন আমীর হাফেজ মাও. আশরাফুল ইসলামসহ স্থানীয় জামায়াত নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলেন।
তাদের সার্বিক খোঁজ খবর নেন এবং এই ঘটনায় তারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে চার হাজার করে মোট ৬০ হাজার টাকা নগদ প্রদান করেন। উক্ত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি বিশেষ মহল অপরৎপরতায় লিপ্ত আছে বলেও উল্লেখ করেন মুহাম্মাদ শাহাবুদ্দীন বিশ্বাস।
যাযাদি/ এমএস