বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

শিবালয়ে ঐতিহাসিক নাটক নবাব সিরাজউদ্দৌলা মঞ্চস্থ  

শিবালয় ( মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:০৯
আপডেট  : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:১৮
শিবালয়ে ঐতিহাসিক নাটক নবাব সিরাজউদ্দৌলা মঞ্চস্থ   
ছবি: যায়যায়দিন

মানিকগঞ্জের শিবালয়ের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবিপত্নী প্রমিলা দেবীর স্মৃতি বিজড়িত তেওতা জমিদার বাড়িতে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।

শিবালয় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ মেলার ৩য় দিন বুধবার রাতে জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাটক 'নবাব সিরাজউদ্দৌলা' মঞ্চস্থ করা হয় ।

বুধবার সরেজমিন তেওতা জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে বুধবার বিকেল থেকেই জমিদার বাড়ি এলাকা ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এসে ভিড় করতে শুরু করেন ।

নানা বয়সী লোকজনের পদচারণায় জমিদার বাড়ি মুখরিত হয়ে ওঠে । কোথাও যেন তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই । গ্রাম-বাংলার ঐতিহাসিক নাটকের কথা শুনে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসেছে।

সব বয়সী মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায় । বিশেষ করে, বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলারা আগেই এসে চেয়ারে বসে নাটক দেখার জন্য অপেক্ষা করেন ।

মানিকগঞ্জের বিখ্যাত ‘জেপি নাট্যগোষ্ঠী’র পরিবেশিত ঐতিহাসিক নাটক 'নবাব সিরাজউদ্দৌলা' এর প্রধান আকর্ষণ নবাব সিরাজ এর ভূমিকায় অভিনয় করেন ‘জেপি গ্রুপের’ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মুরতজা পলাশ। তিনি তার আকর্ষণীয় অভিনয় করে হাজার হাজার দর্শক শ্রোতার মন জয় করেন।

এছাড়া, এ নাটকে স্থানীয় এবং বিভিন্ন জেলার নাট্যশিল্পীবৃন্দ অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেন। নাটক দেখতে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ও দূর-দূরান্ত থেকে আগত হাজার-হাজার নানা বয়সী দর্শক অংশ নিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

শিল্পীরা অভিনয় করে দর্শক-শ্রোতাদের মন জয় করেন । এছাড়া, বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে তেওতা জমিদার বাড়ির রাজ প্রাসাদ পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে।

জমিদার বাড়ির ভেতরেও কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গনে শত-শত মোটরসাইকেল এবং অটোরিক্সায় দর্শনার্থীরা আসেন । অনেকেই বাবা-মা, ভাই-বোন, পরিবার-পরিজন সাথে নিয়ে জমিদার বাড়ির বিভিন্ন মহল ঘুরে দেখেন।

জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণে ফুচকা, চটপটি, হালিম, বাদাম, ঝাল মুড়ি ও বিভিন্ন খাবার দ্রব্য বিক্রি হয় । উৎসুক পর্যটকরা আনন্দের সাথে এসব খাবার কিনে খান। এতে তারাও যেমন খুশি বিক্রেতারাও অনেক লাভবান হন।

এছাড়া হ্যান্ডিক্রাফটস, খেলনা, প্রসাধনী, সাজ-সজ্জার নানা দোকান, কাঠ, বেত, মাটি, লোহার তৈরী আসবাবপত্রসহ বাড়ির যে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস এর দোকান এসেছিল।

এছাড়া, অনেকেই নাগরদোলায় কিংবা নৌকায় উঠছেন । তাদের আনন্দে তেওতা জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণ যেন এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল ।

স্থানীয় তেওতা ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মোল্লা বলেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জমিদার বাড়িতে অতীতে এমন কোনো অনুষ্ঠান কেউ দেখেনি। প্রথমবারের এমন আয়োজনেই সবাই মুগ্ধ। আর আগামীতেও যেন এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়, এমনটা দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

শিবালয় উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, তেওতা জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গনে বৈশাখী মেলার স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এতে সংস্কৃতিমনা মানুষের সরব উপস্থিতি বেড়েছে। স্থানীয়দের সহায়তায় আগামীতেও এখানে আরও বড় পরিসরে ভিন্ন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

উল্লেখ্য, নববর্ষ উদযাপনে শিবালয় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে তেওতা জমিদার বাড়িতে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও লোকজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানের প্রথম দিন সোমবার বিকেল ৩টায় লোক সংগীত, দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় লোকজ গান। তৃতীয় দিন বুধবার সন্ধ্যায় ছিল জেপি গ্রুপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট নাট্যশিল্পী আলী মর্তুজা পলাশ ও তার দলের পরিবেশনায় ঐতিহাসিক নাটক ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে