শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা বঞ্চিত রায়পুরাবাসির দুর্ভোগ চরমে

রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি
  ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:২৬
অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা বঞ্চিত রায়পুরাবাসির দুর্ভোগ চরমে
ছবি: যায়যায়দিন

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ্যাম্ভুুলেন্সের অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগে সাবেক এ্যম্বুলেন্স চালককে পূণরায় রায়পুরায় যোগদানে আপত্তি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে ভুক্তভোগী ও স্থানীয় জনসাধারণ। সরকারী এ্যাম্ভুলেন্সের সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বিষয়টি অজানা থাকায় যুগযুগ ধরে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলাবাসী সরকারী সুবিধা বঞ্চিত হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রাইভেট গাড়ীর সমমান ভাড়া দিয়ে সরকারী এ্যাম্ভুলেন্স ব্যবহার করতে বাধ্যছিল সাধারণ সেবাগ্রহীতারা। সম্প্রতি সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা প্রকাশ হওয়ায় সুবিধা পেতে শুরু করেছে সেবাগ্রহীতারা।

সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল এগারটায় দ্বিতীয় দিনের মতো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ভুক্তভোগীসহ এলাকার সাধারণ লোকজন উক্ত চালকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ¯েøাগান দিতে থাকেন এবং সে পুণরায় এখানে যোগদান করলে তারা মেনে নিবে না বলেও জানান।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ ১৫/২০ বছর রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যম্ভুলেন্স চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন জহির (৫৫) নামে এক চালক। তিনি কর্মরত থাকাকালীন সেবাগ্রহীতাদের নিকট হতে রায়পুরা-ঢাকা ৪/৫ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হতো। যা সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দিগুণ, আড়াইগুণ। এছাড়াও সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতেন তিনি। বছরখানেক আগে তাকে অন্যত্র বদলী করা হয়। তার স্থলে শাজাহান মিয়া নামে একজন চালক যোগদান করেন। তিনি যোগদানের পর পরই এ্যাম্ভুলেন্স এর সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা জনসমুখ্যে প্রকাশ করেন। এতে রায়পুরা হইতে ঢাকা ২ হাজার, রায়পুরা হইতে নরসিংদী ৬শ টাকা, রায়পুরা হইতে ভৈরব ৬শ টাকা ও রায়পুরা হইতে জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ (বাজিতপুর) ৮শ টাকা ভাড়া তুলে ধরা হয়। নতুন চালকের এই সরকারী ভাড়ার তালিকা প্রকাশের পর বিগতদিনের সুবিধাভোগী ও স্থানীয় জনসাধারণ আগের চালক জহির মিয়ার প্রতি ক্ষোভের সৃস্টি হয়। এরই মধ্যে সাবেক চালক জহির মিয়া পুণরায় বদলী হয়ে রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করছেন জেনে ভুক্তভোগী ও স্থানীয় জনসাধারণ কদিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এরিয়ায় অবস্থা করছেন এবং তাকে এখানে যোগদানে আপত্তি জানান। সেই সাথে তাকে এখানে যোগদান না করার দাবী জানান।

কাউসার মিয়া, শামীম খন্দকার, কাজী হোসেন, ইলিয়াস মিয়াসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, এ্যম্বুলেন্স চালক জহির বিগত ১৫/২০ বছর সরকারী ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে। ২ হাজারের স্থলে ৪/৫ হাজার টাকা নিয়েছে। তাকে জরুরীকাজে ফোনে পাওয়া যেত না। জহির ড্রাইভার বিভিন্ন সময় রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় সহ হয়রানী করতো। আমরা জহির ড্রাইভারকে রায়পুরা হাসপাতালে চাই না। বর্তমানে যিনি আছেন তিনি সরকারী ভাড়া হিসেবে রায়পুরা-ঢাকা ২ হাজার, রায়পুরা-নরসিংদী ৬শ টাকা, রায়পুরা-ভৈরব ৬শ টাকা ও রায়পুরা-জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ (বাজিতপুর) ৮শ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। তাই আমরা বর্তমান চালক শাজাহানকে এ হাসপাতালে চাই।

এ ব্যাপারে চালক শাজাহান মিয়া বলেন, আমি এখানে যোগদান করেছি গত বছরের জুন মাসে। এখানে আসার পরই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা জনগণের সামনে তুলে ধরি। এতে প্রতিমাসে ৩০-৪০টি কল আসে। সরকারী ভাড়ার সুবিধা পেয়ে সাধারণ সেবাগ্রহীতারা খুশি। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাহিরে একটি টাকাও নেওয়া অধিকার নেই আমার।

এব্যাপারে অভিযুক্ত জহির মিয়ার সাথে কথা বললে ভাড়া বেশি নেওয়া বিষয়টির সত্যতা স্বিকার করে বলেন, সরকারী ভাড়া ২ হাজার টাকা ঠিক আছে কিন্তু জ্বালানি খরচ পাম্প থেকে বাকী নেওয়ার কথা থাকলেও কোন পাম্প জ্বালানি বাকীতে দেয় না। এমতবস্থায় গাড়ী পড়ে থাকতে হতো। তখন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে রোগীদের কাছ থেকে ভাড়ার সাথে তেল খরচ নেওয়া হতো। যার ফলে ৪/৫ হাজার বা কমবেশি যা আদায় হতো পুরোটাই পরে সরকারী কোষাগারে জমা দিয়ে দিতাম। এতে আমার ব্যক্তিভাবে কোন স্বার্থ হয়নি। যা নিতাম সব চালানের মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে জমা দিতাম।

এ বিষয়ে রায়পুরা উপজেলার স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: খান নুরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, চালক জহির বিগত দিনে অনেক ঝামেলার কাজ করেছে। যার জন্য তাকে এখান থেকে অন্যত্র বদলী করা হয়েছিল। সেবাগ্রহীতারা তার প্রতি অসন্তুষ্ঠ। সে থাকাকালীন মাসে ১০/১২ টার বেশি ভাড়া হতো না। এখন যে আছে সে প্রতি মাসে ৩০/৪০টি ভাড়া পায়। তার সেবায় সাধারণ সেবাগ্রহীতারা অনেক খুশি। জহির এখন আবার বদলী হয়ে এখানে আসায় স্থানীয় অনেকেই ক্ষোব্ধ। এতে আমার কিছূ করার নেই। সে যোগদানপত্র নিয়ে আসলে নিয়মানুযায়ী আমাকে রিসিভ করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে