রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২
সদরপুর উপজেলায় রাস্তার মধ্যের ছাপড়া ঘর উচ্ছেদ

৮ গ্রামের ৬ হাজার মানুষের চলার পথ সুগম হলো

সদরপুর (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
  ০৪ মে ২০২৫, ১৭:৫৬
৮ গ্রামের ৬ হাজার মানুষের চলার পথ সুগম হলো
ছবি: যায়যায়দিন

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরমানাইর ইউনিয়ন। যেখানে একটি মাটির রাস্তা নিয়ে দুর্ভোগে রয়েছে ১৫বছর ধরে প্রায় ৮ গ্রামের ৬হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই ওই গ্রামবাসীর চলাচলে সৃষ্টি হয় চরম দুর্ভোগ। পাশাপাশি যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী থাকায় ওই পরিবারগুলো পরিবহন করতে পারে না এলাকার উৎপাদিত কৃষিপন্য বা অন্যান্য সামগ্রী।

তাদের দুর্ভোগ লাঘবে ইউপি চেয়ারম্যানের আবেদনের ভিত্তিতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে গ্রামীন সড়ক উন্নয়নে মাটির রাস্তার বিপরীতে ইটের রাস্তার প্রকল্প অনুমোদন হয়। এতে কয়েক হাজার মানুষ খুশী হলেও রাস্তাটি নির্মানে বাধা দেয় রাড়ী কান্দি গ্রামের ফটিক বেপারী ও তার পরিবারের লোকজন। সদরপুর উপজেলার চরমানাইর ইউনিয়নের রাড়ি কান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আজ রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া সুলতানা রাস্তার কয়েক ফুট অংশ জুড়ে থাকা ফটিক বেপারীর দুটি ছাপড়া ঘর উচ্ছেদ করেন। এতে করে ওই রাস্তা নির্মান শেষ হলে ৮গ্রামের প্রায় ৬হাজার মানুষের চলাচলের দুর্ভোগ শেষ হবে বলে জানান স্থানীয়রা।

এলাকাবাসীর ভাষ্য মতে, রাস্তাটি নির্মান করতে গেলে ফটিক বেপারী ও তাদের পরিবারের লোকজন বাধা দেয়। পূর্বে তাদের বাঁধার কারনে অন্য খাল অংশে বাশের সাকো দিয়ে পার হতে হতো। বর্তমানে ওই রাস্তাটি মাটি দিয়ে ভরাট রয়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে চরমানাইর ইউনিয়নের নয়াকান্দি, রহমাতুল্লাহ মাতুব্বর কান্দি, বেপারী কান্দি গোবিন্দ মন্ডলের কান্দি, ইসমাইল মাতুব্বর কান্দি, গিয়াসউদ্দিন বেপারীর কান্দি,আনন্দ মন্ডলের ডাঙ্গী গ্রামের লোকজন ওই রাস্তা পার হয়ে চরমানাইর ঘাট পাড়ি দিয়ে সদরপুর,ভাংগা,শিবচর ও ঢাকার সাথে যোগাযোগ করেন।

ওই রাস্তা নির্মান করতে গেলে বাঁধার মুখে পড়ে ঠিকাদার ফকির আল মামুন ও সদরপুর সহকারী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম। এ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম ও কয়েকশত এলাকাবাসী সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া সুলতানার নিকট বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি (ইউএনও) সরেজমিনে গিয়ে এলাকার উন্নয়নের জন্য ফটিক বেপারী কে তিন কার্যদিবসের মধ্যে রাস্তার অংশ জুড়ে থাকা দোচালা দুটি টিনের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য গত ৩০শে এপ্রিল নোটিশ প্রদান করেন।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামের ভাষ্য, ‘আমি এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে তিনবার শালিশ বৈঠক করেছি। কিন্তু তারা কোনোভাবেই রাস্তা হোক তা চান না। এলাকার উন্নয়নের জন্য যেখানে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করবে এবং যানবাহন চলবে সেখানে তার বাধা দিচ্ছিল। উচ্ছেদ হওয়া ওই পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বললে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি’।

ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেক শেখ বলেন, ‘আমি আমার ১৩টি ঘর সরিয়ে নিচ্ছি রাস্তার মধ্যে পড়ার কারনে। কারন গ্রামে ইটের রাস্তা না থাকার কারনে বর্ষা মৌসুমে চলাচলে বিভিন্ন সমস্যা হয়। কোনো যানবাহন আসতে পারে না। হাজার হাজার মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তাটি খুবই দরকার ছিলো’।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া সুলতানা জানান, ‘ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয়রা আমার নিকট বিষয়টি জানান, আমি সরেজমিনে গিয়ে রাস্তার দু’পাশের বাসিন্দাদের তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলি। একপক্ষ সরিয়ে নিলেও ফটিক বেপারীর তার দোচালা টিনের ঘর সরিয়ে নেননি। এলাকার সড়ক উন্নয়নে ও জনগনের আবেদনের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন এখন রাস্তা হওয়ার কারনে প্রতিদিন হাজার হাজার জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচল করতে পারবেন’।

উল্লেখ্য, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগ সদরপুর উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের আওতায় চরমানাইর ইউনিয়নের রাড়ী কান্দি ফটিক বেপারীর বাড়ি হতে ত্রানের ব্রীজ পর্যন্ত এইচবিবি দ্বারা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইটের রাস্তা অনুমোদন করে টেন্ডার দেওয়া হয়। সরকারিভাবে রাস্তাটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮লক্ষ টাকা ও চুক্তিমূল্য রয়েছে ৭লক্ষ ৬০হাজার টাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে