বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২
কর্মহীন শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক শ্রমিক

যাদুকাটা নদীতে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ 

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০৭ মে ২০২৫, ১১:১৪
যাদুকাটা নদীতে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ 
ছবি: যায়যায়দিন

তাহিরপুরে যাদুকাটা বালুমহালে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সেই সাথে গত একমাস ধরে নদীতে কাজ না থাকায় শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকেই কাজ না পেয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে কাজের সন্ধানে ছুটছেন।

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার পাহাড়ি নদী যাদুকাটা। এ নদী থেকে যুগ যুগ ধরে বালু পাথর আহরন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার শতাধিক গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক জনগোষ্ঠি। সেই সাথে এ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন হাজারো ব্যবসায়ী।

কিন্তু গত একমাস ধরে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় শ্রমিকরা যাদুকাটা নদীতে বালু পাথর উত্তোলন ও পরিবহন কাজ করতে পারছেন না। অথচ মাস খানেক পূর্বেও যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ নদীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার শ্রমিক বালু পাথর উত্তোলন কাজে ব্যাস্ত সময় পার করতো। বর্তমানে তাদের কোন কাজ না থাকায় অনেকেই কাজের সন্ধানে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কাজের সন্ধানে ছুটছেন বলে এলাকার অনেক শ্রমিক জানিয়েছেন।

যাদুকাট নদীর পূর্ব পার লাউড়ের গড় গ্রামের বালু শ্রমিক রহমত আলী বলেন, ‌‌ ‌‌‌‌‌এ ‌নদীতে কাজ করেই হাজার হাজার শ্রমিকের সংসার চলে। একমাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। কাজ না থাকায় অনেকেই শহরে চলে যাচ্ছেন।

জামালগঞ্জ উপজেলার নোয়াহালট গ্রামের বালি পাথর ব্যবসায়ী গোলাম সারোয়ার বলেন, ‌আমরা জামালগঞ্জ উপজেলার সুরমা নদীর দুর্লভপুর গ্রামের আশপাশে যাদুকাটা নদীর বালু পাথর এনে স্টক করি। বর্তমানে নদী বন্ধ থাকায় এ স্টক ব্যববসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে গেছেন।আমার দ্রুত যাদুকাটা নদীর বালি পাথর উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা প্রতাহার চাইছি।

জানা যায়, ১৪৩২ বাংলা সালের জন্য জেলার বৃহৎ যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ ইজারা প্রদান করেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এতে সর্বোচ্চ ইজারাপ্রাপ্ত হন যাদুকাটা-১ তাহিয়া স্টোন ক্রাসারের স্বত্বাধিকারী নাসির মিয়া ৩৩ কোটি টাকা এবং এবং যাদুকাটা-২ মেসার্স জিনান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রুবেল মিয়া ৫৫ কোটি টাকায়। পরে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বালুমহাল দুটির ইজারা কার্যক্রমের ওপর ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট বিভাগ। একপর্যায়ে যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ এর ইজারা কার্যক্রমের ওপর উচ্চ আদালতে করা রিট পিটিশন আগামী দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ। পরে এ নিয়ে ‘নো অর্ডার’ দেন আদালত। একই সাথে আগামী ২ মাসের মধ্যে মহাল দুটি থেকে সকল ধরনের বালু উত্তোলন বন্ধ রাখারও নির্দেশও দেন আদালত।

যাদুকাটা-১ তাহিয়া স্টোন ক্রাসারের স্বত্ত্বাধিকারী নাসির মিয়া বলেন, সর্বোচ্চ ইজারাপ্রাপ্ত হয়েও আমরা নদীতে যেতে পারছিনা। গত এক মাস ধরে নদী বন্ধ রয়েছে। নদী বন্ধ থাকায় অর্ধলক্ষধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। উচ্চ আদালতে করা রিট পিটিশন আগামী দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের মহামান্য আপিল বিভাগ, আসা করছি আমরা ন্যায় বিচার পাবো। যাদুকাটা নদীতে শ্রমিকরা আবরো কাজ করতে পারবে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, ‌‘উচ্চ আদালতের নিষেধ থাকায় যাদুকাটা নদীতে বালু, পাথর উত্তোলনে বন্ধ রয়েছে। আইনী জটিলতা শেষ হলে শ্রমিকরা আবারো নদীতে কাজ করতে পারবেন’।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে