সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
হাসপাতালের বেডে ইতিহাস

মরিয়মের কোলে একসাথে ছয় সন্তান

ঈদগাঁও (কক্সবাজার)  প্রতিনিধি
  ১১ মে ২০২৫, ১৫:৫৯
আপডেট  : ১১ মে ২০২৫, ১৬:৫৫
মরিয়মের কোলে একসাথে ছয় সন্তান
প্রতীকি ছবি

চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ন্যাশনাল হসপিটাল চট্টগ্রাম লিমিটেড-এ ঘটেছে এক অনন্য ঘটনা। একসাথে জন্ম নিয়েছে ছয়টি শিশু।পাঁচটি কন্যা ও একটি পুত্র। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই শিশুদের জন্ম হয়েছে স্বাভাবিক (নরমাল) ডেলিভারির মাধ্যমে।

সফল এই জটিল ডেলিভারি করিয়েছেন হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নাজনীন সুলতানা লুলু। বর্তমানে মা এবং ছয়টি নবজাতক—সকলেই সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সেই মহিয়সী মা হলেন কক্সবাজার ঈদগাঁও উপজেলার জাগিরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৩০)। শনিবার ১০ মে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতালে দুপুরে এই বিরল জন্মপ্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করেন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নাজনিন সুলতানা লুলু।

ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন ঈদগাঁও ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের এই সাহসিনী মা চিকিৎসকদের সহায়তায় ছয় সন্তানের জন্ম দেন, যা সাধারণত সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

তবে চিকিৎসকদের পূর্বপ্রস্তুতি, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কারণে স্বাভাবিকভাবে এই ডেলিভারি সম্পন্ন হয়।

হাসপাতালের নিউনেটাল ইউনিট সূত্রে জানা যায়, ছয় নবজাতকের মধ্যে একজন ছাড়া বাকিজনদের ওজন তুলনামূলকভাবে কম হলেও তারা ঝুঁকিমুক্ত। তাদের নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে এবং পর্যবেক্ষণ চলছে।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে ন্যাশনাল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কারিশমা সুলতানা বলেন, ‘গত ৫ বছরে প্রতিমাসেই ন্যাশনাল হাসপাতালে আমার দেখা একসঙ্গে দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত নবজাতক জন্মের ঘটনা ঘটেছে।

কিন্তু নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একসঙ্গে ছয় নবজাতকের জন্মের ঘটনা এবারই প্রথম। ১৯ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় থেকে ওই মা লুলু ম্যাডামের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।

তারপর থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। আমরা সম্ভাব্য জটিলতা আঁচ করতে পেরেছিলাম, তবে শেষমেশ স্বাভাবিকভাবে সফলভাবে ডেলিভারি করাতে পেরে গর্বিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (ছয় নবজাতকের মা) এ নিয়ে চারবার সন্তান জন্ম দিয়েছেন। দ্বিতীয়বারের সময় একসঙ্গে চার সন্তানের ভ্রুণ গর্ভে ছিল।

কিন্তু সেসময় ওই বাচ্চাগুলো পাঁচমাসের মাথায় নষ্ট হয়ে যায়। ওই সময় তিনি শারীরিক জটিলতায় ভুগে অনেক কষ্ট করেছেন বলেও আমাদের জানিয়েছেন।

কয়েকবছর পর আবার আরেকটা বাচ্চা হয়। এইবার আবার গর্ভধারণ করলে আল্ট্রাতে পাঁচ সন্তানের অস্বিত্ব পাওয়া যায়। পরক্ষণে তারা ম্যাডামের তত্ত্বাবধানে চলে আসে।

রিপোর্ট অনুযায়ী ‘আমরা জানতাম ৫ জন বেবি হবে কিন্তু ডেলিভারির সময় দেখলাম ছয় জন বাচ্চা। সাধারণত নরমাল ডেলিভারিতে ৪০ সপ্তাহের মতো সময় লাগে। যদি টুইন বেবি হয় তাও কমপক্ষে ৩৪ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়। কিন্তু এই বাচ্চাগুলো একটু অপরিপূর্ণ। ৩০ সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে গেছে।

একসাথে এতো শিশু জন্মানো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে এ চিকিৎসক বলেন, ‘অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় ডেলিভারির সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এ জন্য আমরা সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। আমরা মাথায় রেখেছি— কোনোভাবেই মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে দেওয়া যাবে না। ডোনার থেকে শুরু করে ডেলিভারির আগে-পরে সব ধরনের মেডিসিন সব পর্যাপ্ত রাখা ছিল। যাতে ইর্মাজেন্সি তৈরি হলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে