মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আট বছরের শিশুর ধর্ষণ ও হত্যার আলোচিত মামলার বিচার ১৪ কর্ম দিবসে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম মুকুল।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে নির্দেশনা ছিল- মামলা এফআইআর করা থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার কার্য সম্পন্ন করা। এবং আইন মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা উনি ঘোষণা করেছিলেন- ৩০ কার্যদিবসে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে।’
তার ভাষ্য, “…আমরা এই নির্ধারিত সময়ের পূর্বে এই মোকাদ্দমার বিচার কার্য সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা ১৪ কর্ম দিবসে এই মোকদ্দমার সকল প্রসেস মেইনটেন্স করে আজকে আদালত রায় দিয়েছে।”
শনিবার সকালে রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে এ কথা বলেন পিপি মুকুল।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মূল আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, খালাস পেয়েছে বাকি তিনজন।
মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, প্রধান আসামি হিটুর প্রাণদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত। বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারা খালাস পেয়েছে।
তার ভাষ্য, ‘আমরা রাষ্ট্রপক্ষ, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরে আলোচনা করে খালাসকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করব, পরবর্তীতে আমরা সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মামলার বিশেষ কৌঁসুলি এহসানুল হক সমাজী বলেন, ‘হিটু শেখকে বিচারক সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছেন এবং অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দিয়েছেন। সুতরাং, এই রায়ের মাধ্যমেআরেকটি জিনিস প্রমাণিত হলো যে- বিজ্ঞ বিচারিক আদালত স্বাধীনভাবে তার জুডিশিয়াল মাইন্ড অ্যাপ্লাই করে তিনি জাজমেন্ট প্রদান করেছেন।’
ঘটনাপ্রবাহ
৬ মার্চ: সকালে শিশুটি তার বোনের বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয়। ওইদিনই শিশুটিকে মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
৭ মার্চ: শিশুটির চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
৮ মার্চ: পরে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এদিন শিশুটির মা চারজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা সদর থানায় একটি মামলা করেন। শুরু থেকেই চার আসামি পুলিশ হেফাজতে ছিলেন।
৯ মার্চ: শিশুটির ধর্ষণের বিচারের দাবিতে ছাত্র-জনতার অব্যাহত বিক্ষোভ।
১০ মার্চ: নিরাপত্তার কারণে রাতে শুনানি করে চার আসামিকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
১২ মার্চ: তিন পুরুষ আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ।
১৩ মার্চ: শিশুটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যায়। আসামিদের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
ওইদিনই বিমান বাহিনীর একটি উড়োজাহাজে শিশুটির মরদেহ মাগুরায় নিয়ে যাওয়া হয়। দুই দফা জানাজা শেষে তাকে রাতে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
১৪ মার্চ: পুলিশ জানায়, শিশুটি মারা যাওয়ায় আগের ধর্ষণ মামলার পাশাপাশি হত্যা মামলাও হয়েছে।
১৫ মার্চ: ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রধান আসামি হিটু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
৮ এপ্রিল: মাগুরার পুলিশ সুপার জানান, হিটু শেখের ডিএনএ প্রতিবেদনে শিশুটিকে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
১৩ এপ্রিল: মাগুরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন।
২০ এপ্রিল: শুনানি শেষে আদালত অভিযোগ গঠনের জন্য ২৩ এপ্রিল দিন রাখেন।
২৩ এপ্রিল: অভিযোগ গঠনে শেষে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
২৭ এপ্রিল: শিশুটির মা ও মামলার বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
৮ মে: মামলার মোট ২৯ জনের সাক্ষ্যপ্রদান শেষ হয়।
১৩ মে: দুই দিনের যুক্তিতর্ক শেষে মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান আলোচিত এই মামলার রায়ের জন্য ১৭ মে দিন রাখেন।