বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

নিজের মাথা কেটে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর চেষ্টা 

সালঙ্গা (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১৭ মে ২০২৫, ১৪:০৯
নিজের মাথা কেটে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর চেষ্টা 
ছবি: যায়যায়দিন

নিজের মাথা নিজেই কেটে নাতির নামে মামলা করার অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের নাজিম উদ্দীন (৭৩) বছর বয়সী এক বৃদ্ধ লোকের বিরুদ্ধে।

গত ৯মে শুক্রবার এমন ঘটনায় রায়গঞ্জ থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন বৃদ্ধ নাজিম উদ্দিন। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রক্ষগাছা ইউনিয়নের এলাঙ্গী গ্রামে। শুক্রবার ১৬ মে সকালে সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা মিলেছে।

এলাকার স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা জানান, জায়গা জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এলাঙ্গী গ্রামের মৃত গোলাম রব্বানীর ছেলে ফারুক হোসেন, বাবুল আক্তার, টিক্কা ও বকুল সহ একই গ্রামের নাজিম উদ্দিনের নামে কোর্টে মামলা চালিয়ে আসছিলেন। চলমান সেই মামলাকে কেন্দ্র করে দু পক্ষের সাথে কথা কাটাকাটি হলে নামিজ উদ্দিন তার নিজের মাথা নিজেই কেটে তার নাতিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।

তার চাঞ্চল্যকর মিথ্যা মামলা করায় এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে নানান আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।

স্থানীয়দের কাছে গত ৯ তারিখে কি ঘটেছিল সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, নাজিম উদ্দিনের উপরে হামলার ঘটনা এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের কোন ঘটনা ঘটেনি।

নাজিম উদ্দিন শহরে গিয়ে নিজের মাথা নিজেই কেটে তার নাতিদের ফাসানোর চেষ্টা করেছেন। গত ৯ তারিখে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাজিম উদ্দীনের ওপর কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি এবং রক্তক্ষরণ অবস্থায় আহত নাজিম উদ্দিনকে কে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া ও কেউ দেখেনি।

নাজিম উদ্দীন একজন প্রতারক ও মিথ্যেবাদী। এলাকার কেউ তাকে দেখতে পারে না এবং এলাকায় তার কোন সমাজ নেই। সে জোর করে লাঠিয়াল বাহিনী ভাড়া করে ফারুকদের জমি ভোগ দখল করছে।

গ্রামের আলম সেখ, তুযাম সেখ ও রব্বানীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, নাজিম উদ্দিনের সাথে ফারুকদের মূল বাজা জমি নিয়ে।

যে বাজার জন্ম হয়েছিল ১৯৯১ সালে।১৯৯১ সালে নাজিম উদ্দীন এলাঙ্গী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন এবং প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতাংশ জমি দলিল করে স্কুল করেছিলেন নাজিম উদ্দীন।

কিন্তু সেই ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে নাজিম উদ্দীনের জমি ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ। বাকি ১৫ শতাংশ জমির মালিক ছিল ফারুকের বাবা মৃত গোলাম রব্বানী। ফারুকের বাবা গোলাম রব্বানী জমি উদ্ধারের জন্য খুব চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেননি।

বাবার মৃত্যুর পর তার ছেলেরা সেই জমি উদ্ধার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে। আমরা গত দুই দিন আগে জানতে পারি নাজিম উদ্দীন ফারুখদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা মামলা করেছেন।

ফারুখরা কোথায় নাজিম উদ্দীনকে মেরে ফেলার জন্য আক্রমন করেছিল তা পুরো গ্রামের লোকজন বলতে পারবে না এবং এই ঘটনা এলাকার কোন মানুষ দেখেনি।এই মামলা করে ফারুখদের ফাসানোর চেষ্টা করছে এর মূল কারন নাজিম উদ্দীন মামলায় হেরে যাবেন।

এই হলো নাজিম উদ্দীনের সাথে ফারুকদের বিবাদের মূল কারন। স্কুলের জমি বাদ দিয়ে ও ফারুকদের আরো জমি জোর করে লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে জমি ভোগ দখল করছেন নাজিম উদ্দীন। মূলত নাজিম উদ্দীন একজন খারাপ মানুষ। এলাকার কারো সাথে তার মিল নেই।

ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা হলে তারা বলেন, নাজিম উদ্দীন আমার দাদা। সে খুব চতুর মানুষ। ১৯৯১ সালে স্কুল করার সময় সরকারের সাথে জালিয়াতি করেছেন।সে স্কুলের নামে ৩৩ শতাংশ জমি দলিল করে দিয়েছেন যার মধ্যে ১৫ শতাংশ জমির মালিক আমার বাবা। আমার বাবার কেনা সম্মতি তিনি স্কুলের নামে দলিল করে দিয়েছেন।

আমার বাবা যখন এই বিষয়ে জানতে পারেন তখন আমার বাবা সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নাজিম উদ্দীন কোন পাত্তা দেয়নি। আমার বাবা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন। বাবার মৃত্যুর পর এখন আমরা নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেছি।

আগামী ২৭ তারিখে সেই মামলার তারিখ। মামলায় হেরে যাবে এই জন্য গত ৯ তারিখে একটা নাটক সাজিয়ে শহরে গিয়ে নিজের মাথা নিজেই কেটে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গ্রিবিয়াজ সার্টিফিকেট নিয়ে থানায় আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করেছে।

গত ৯ তারিখে এমন ঘটনা ঘটেনি। অত্র গ্রামের কেউ এই বিষয়ে কোন কিছুই জানে না। মামলার নকল তুলেছি তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন গত ৯ তারিখে সকাল সাড়ে ছয়টার সময় ও সন্ধ্যা সাতটার সময় আমরা চার ভাই তাকে হত্যার উদ্দেশ্য আক্রমণ করি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এমন ঘটনার কথা গ্রামের কেউ বলতে পারে না। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি এর সঠিক তদন্ত চাই। এই মামলার সঠিক তদন্ত হলে বাদী নাজিম উদ্দীন নিজেই ফেঁসে যাবে।

এদিকে মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৯ তারিখে নাজিম উদ্দীন বাদী হয়ে রায়গঞ্জ থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা করেন। এজাহারে তিনি বর্ণনা করেছেন গত ৯ তারিখ সকাল সাড়ে ছয়টার সময় আমি আমার বাড়ির দক্ষিণ পার্শে নিজ জমি দেখতে গেলে বিবাদীগণ আমাকে দেখিতে পাইয়া পূর্ব শত্রুতার জের ধরিয়া গালাগালি শুরু করে। আমি বাধা নিষেধ করিলে ১ নং বিবাদী আমার ওপর অতর্কিত ভাবে এলোমেলো কিল ঘুষি লাথি মারতে শুরু করে। তাতে আমার শরিরের বিভিন্ন অংশ ফুলা ও জখম হয় এবং আমার বাম চোখে আঘাত পাই। পরে আমার ডাক চিৎকার শুনে স্বাক্ষীগণ ও অন্য লোকজন এগিয়ে আসলে বিবাদীগণ দ্রুত পালিয়ে যায় ও উপস্হিত লোকজন আমাকে স্হানীয় ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। পরবর্তীতে সন্ধ্যা সাতটার সময় ডাক্তার দেখানোর জন্য বের হলে ১ নং স্বাক্ষীর বাড়ির সামনে বিবাদীগণ দলবদ্ধ হইয়া পূর্বপলিকল্পিত ভাবে ধারালো ছুরি, লোহার রড,কাঠের বাটাম ও বাশের লাঠি নিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্য আক্রমণ করে।৫ নং বিবাদীর হুকুমে ১নং বিবাদীর হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার মাথা লক্ষ্য করিয়া স্বজোরে কোপ মারিলে মাথার বাম পার্শের উপরিভাগ মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত গুরুতর জখম হয়। পরবর্তীতে উপস্হিতি লোকজন আমাকে উদ্ধার করিয়া সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।মামলার বাদী ও স্বাক্ষীগনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। ( উল্লেখ্য এজাহারের মূল অংশ তুলে ধরা হয়েছে)।

এবিষয়ে মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক শাহ আলমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবিষয়ে রায়গঞ্জ থানার ওসি (তদন্তের) সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে