টাঙ্গাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে(এলজিইডি) চলতি অর্থ বছরে আওয়ামীলীগের ফ্যাসিস্ট এমপিদের সুপারিশকৃত ২৮টি উন্নয়ন কাজের স্কীম বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে দপ্তরের চলমান ৫৪৭টি উন্নয়ন স্কীমের ৪০টিরও বেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রæত কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়ে চূড়ান্ত পত্র দেওয়া হয়েছে। ফলে গত ৯ মাসে এলজিইডির উন্নয়ন কাজে গতি বেড়ে গড়ে ৮১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
জানাগেছে, টাঙ্গাইল এলজিইডিতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিভিন্ন নামে ১৯টি প্রকল্পের অধীনে ২২৮৭টি স্কীম গ্রহণ করা হয়। স্কীমগুলোর প্রাক্কলিত ব্যয় বা চুক্তিমূল্য ধরা হয় প্রায় দুই হাজার ৫৬৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে প্রায় এক হাজার ৯১৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪৭৯টি স্কীমের কাজ শেষ করা হয়েছে এবং ৫৪৭টি স্কীমের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।
এছাড়া বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক এমপিদের সুপারিশকৃত ২৮টি স্কীমের উন্নয়ন কাজ বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে। টাঙ্গাইল এলজিইডি গৃহীত ১৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টি প্রকল্পের বাতিলকৃত ২৮ স্কীমের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলায় গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অর্থাৎ টাঙ্গাইল প্রজেক্টের সর্বোচ্চ ১১টি, এমআরআরআইডিপি এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০টি, সিআইবিআরআর এর তৃতীয় সর্বোচ্চ ২টি রয়েছে। এছাড়া দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, উপজেলা-ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনুর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্প, সারাদেশে পুকুর খাল উন্নয়ন প্রকল্প, সাপোর্টিং ফর রুরাল ব্রিজেস প্রজেক্ট এবং ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের ১টি করে স্কীম বাতিল করা হয়েছে।
এলজিইডি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান যোগদান করেই উন্নয়ন প্রকল্পের স্কীমগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। সরেজমিনে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৮টি স্কীম সম্পূর্ণ বাতিল ও চলমান ৫৪৭টি স্কীমের কাজ দ্রæত শেষ করার জন্য ৪০টিরও বেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দিয়ে চূড়ান্ত পত্র দিয়েছেন। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলমান স্কীমের কাজে গতি বেড়েছে। গত ৯ মাস ধরে চলমান ৫৪৭টি উন্নয়ন স্কীমের কাজের অগ্রগতির গড় হার ৮১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান দায়িত্বভার পেয়েই উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি ও কাজের মান নিয়ে তদারকিতে নামেন। তিনি উপজেলা প্রকৌশলীদের দ্রæত ও মান সম্মত উন্নয়ন কাজ নিশ্চিতে নির্দেশনা দেন।
এতে তারা কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুরোধ-উপরোধ মানতে পারছেন না। তারা গুণগত মান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ বুঝে নিতে তৎপর হয়েছেন।
স্ব স্ব স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার সড়ক-সেতু-কার্লভাট নির্মাণে ইদানিংকালে বেশ তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন দিন ও রাতে উন্নয়ন কাজ করছেন। স্থানীয় এলজিইডির লোকজন প্রায় দিনই কাজের গুণগত মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। এভাবে উন্নয়ন কাজ করা হলে দেশ অনেক আগেই উন্নত রাপষ্ট্রে পরিনত হতো।
কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত¡াধিকারী জানান, উন্নয়ন কাজে এখন আর কোনোপ্রকার অবহেলা বা ধীরগতি এবং ইট-বালু-খোয়া ব্যবহারে সামান্যতম ব্যত্যয় করা যাচ্ছেনা। এ নিয়মে কাজ করে তারা লাভবান হতে পারবেন না। ফলে তারা লাভের কথা চিন্তায় না এনে কাজ সমাপ্ত করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। উন্নয়ন কাজ বাতিল হওয়া অন্তত তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত¡াধিকারী জানান, সকল নিয়ম মেনে তারা টেন্ডারে অংশ নিয়ে কাজ পেয়েছিলেন। নানা কারণে কাজ সমাপ্ত করতে বিলম্ব হচ্ছিল। কিন্তু তাদের কাজগুলো নির্বাহী প্রকৌশলী বাতিল করে দিয়েছেন। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী সহ এলজিইডির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, টেন্ডারে কাজ পেয়ে দীর্ঘদিন উন্নয়ন কাজ ফেলে রাখার কারণে ২৮টি স্কীম বাতিল করা হয়েছে। যেসব কাজ বাতিল করা হয়েছে সেগুলোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ফেলে রাখা কাজগুলো বাতিল করায় অন্যান্য ঠিাকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় হওয়ায় জেলায় এলজিইডির উন্নয়ন কাজে গতি ফিরে এসেছে। তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো এলজিইডির উন্নয়ন কাজের অংশীজন। নির্দিষ্ট সিডিউল অনুযায়ী উন্নয়ন কাজ করা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এলজিইডি ও ঠিকাদারের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু প্রতিটি উন্নয়ন কাজ বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে সময় এবং গুণগত মানে কোনোপ্রকার ছাড় দেওয়া হবেনা।