জীবিকার তাগিদে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বলিভদ্র ইউনিয়নের পাঁচপটল গ্রামের দুই সন্তানের জনক বাবলু মিয়া। স্বপ্ন ছিলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে পৌঁছে কাজ করে শিশু সন্তান সহ স্ত্রী’র মুখে দু মুঠো ভাত দেওয়ার।
কিন্তু প্রবাস জীবনে ঘটেছে তার উল্টো। সেই স্বপ্ন বাবায়ন করতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব এই দুই সন্তানের এই জনক। বর্তমানে দেশে ফিরে দালালের বাড়ীতে এক সপ্তাহ যাবত স্ত্রী সন্তান নিয়ে এঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ৬ দিন যাবত ক্ষতিপূরণের দাবীতে বসেছেন ভোক্তভোগী বাবলু মিয়া।
ভোক্তভোগী প্রবাশ ফেরত বাবলু মিয়া অভিযোগ করেন, গত ৪ মাস পূর্বে কেরামজানি এলাকার নজরুল ডাক্তারের ছেলে বিদেশের দালাল আতাউর রহমান সজীব ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে আমাকে সৌদি আরব পাঠায় কাজের জন্য।
কিন্তু আমাকে সৌদি আরব পাঠানোর পরে সেখানে গিয়ে জানতে পারি আমাকে ভ্রমণ ভিসায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে ৩ মাস থাকার পরে আকামা না থাকার কারণে আমাকে পুলিশে ধরে জেলখানায় পাঠায়। পরে জেল খেটে আমি দেশে ফিরে আসি। বিদেশ পাঠানোর সময় আমার কাছে টাকা না থাকায় সজীব তার পূর্বাশা সমিতি থেকে ঋণ দেয়।
সেই ঋণের টাকা আর আমার ভ্যান বিক্রি ও কিছু জমি ছিলো সেই জমি বন্ধক রেখে এবং কী আরো কয়েক লাখ টাকা দাদন (সুদী) নিয়ে বিদেশে পাঠাবে বলে আদম দালাল সজীব কে দেই। এখন আমি নি:শ^ হয়ে পথের ফকির হয়ে গেছি। আমি বিদেশ থেকে বাড়ী এসে শিশু দুই ছেলে মেয়েসহ স্ত্রী নিয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছি। তার কাছে এঘটনায় টাকা ফেরত চাইলে দিবে দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে। এমতবস্থায় আমি আমার শিশু সন্তানদের নিয়ে অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছি।
তাই আমি এখন টাকা ফেরতের দাবীতে ৬ দিন যাবত সজীব দালালের বাড়ীতে আমি আমার কোলের একটি দুধের মেয়ে বাচ্চা ও আরেকটি ছেলে বাচ্চা সহ স্ত্রীসহ অবস্থান করছি। যদি টাকা না পাই মরণ ছাড়া গতি নাই। আমার সাথে সজীব যে প্রতারণা করেছে তার বিচার চাই , সেই সাথে আমার টাকা ফেরত চাই। এঘটনায় আমি পুলিশ প্রশান সহ বর্তমান সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরতসহ প্রতারক দালাল সজীব ও তার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করছি।
বাবুলের স্ত্রী মেহেরুন জানান, আমাদের সাথে প্রতারণা করে সজীব দালাল কাজের ভিসা না দিয়ে আমার স্বামীকে ভ্রমণ ভিসায় বিদেশ পাঠিয়ে আমাদেরকে নি:শ^ করে দিয়েছে। আমরা এখন চলব কী করে। আমার স্বামী সৌদি আরবে জেল খেটে দেশে ফিরেছে সে রোগাকান্ত হয়েগেছে। আমি এঘটনায় সঠিক বিচার চাই প্রশাসনের কাছে।
এঘটনায় স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ-সভাপতি বকুল মিয়া জানান, বিদেশ পাঠানোর কথ বলে যখন বিদেশের দালাল সজীব বাবলুর কাছ থেকে টাকা নেয় তখন আমি সাথে থেকে টাকা দিয়েছি। তবে এমন অসহায় গরীব ভ্যান চালকের সাথে প্রতারণা করা কোনভাবেই ঠিক হয়নি। এঘটনায় সঠিক বিচার হওয়া দরকার।
এলাকাবাসী আনোয়ার হেসেন, সোহেল রানা, শরাফত আলীসহ আরো অনেকেই বিদেশের দালাল সজীব কে আইনের আওতায় এনে ভ্যান চালক বাবলু’র টাকা ফেরত সহ তার শাস্তির দাবী করেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত আতাউর রহমান সজীব এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাবলু কে বিদেশ পাঠানো হয়েছিল। সে নিজে থেকেই ফেরত এসে এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকজন আমার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়ার লক্ষে বাবুল ও তার পরিবারকে আমার বাড়ীতে তুলে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতাছে।
কী প্রভাবশালীদের নাম প্রকাশ করলে তার প্রাণের ভয় আছে বলে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
স্থানীয় পাঁচপটল ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মো. ইলতুতমীশ তিনি বলেন, এই সমস্ত দালালেরা গরীব অসহায় লোকদেরকে লক্ষ্য করে কাজের কথা বলে বিদেশ পাঠিয়ে প্রতারণা করে অর্থ লুটে নেয়। এসমস্ত প্রতারকদের কে আইনের আওতায় আনার দাবী করছি।
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহীন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ‘এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখতে ধনবাড়ী থানার ওসি কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ‘
থানার ওসি এস এম শহিদুল্লাহ গনমাধ্যম কে জানান, এঘটনায় পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো। অভিযোগ পাওয়ামাত্রই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।