শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রূপসায় সূর্যমুখী চাষে ঝুকছে কৃষক 

রূপসা (খুলনা)  প্রতিনিধি
  ২৪ মে ২০২৫, ১১:২২
রূপসায় সূর্যমুখী চাষে ঝুকছে কৃষক 
ছবি-যায়যায়দিন

খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় খুলনার রূপসায় বিস্তীর্ণ জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করঝে কৃষকরা।

সূর্যমুখী আবাদ থেকে শুরু করে পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ, মজুত, তেল উৎপাদন, তেল ও খৈল বাজারজাতকরণেও কৃষকেরা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। ফলে বিগত বছরের চেয়ে এবার সূর্যমুখী চাষে কৃষকেরা অনেক বেশি লাভের মুখ দেখছেন। লাভ বেশি হওয়ায় তিলক সূর্যমুখী ভিলেজ নামে একটি কমিটি করা হয়েছে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে।

1

কৃষি দপ্তর জানিয়েছেন, রূপসা উপজেলার টিএসবি ইউনিয়নের তিলক গ্রামে এবার ১৩ হেক্টর ও উপজেলায় ৭০হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করা হয়েছে। কৃষকদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশপাশি দেওয়া হয়েছে উন্নতমানের বীজ ও জৈবসার (ভার্মি কম্পোস্ট)। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনার পাশপাশি ফসলে পোকামাকড়ের আক্রমণে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব বালাইনাশক। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যার কারণে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ফলনও হয়েছে ভালো। প্রকল্পের পক্ষ থেকে আধুনিক তেল সংগ্রহের মেশিন বসানো হওয়ায় কৃষকদের মুখে আনন্দের হাসি বইছে।

কৃষক দাউদ আলী বলেন, ‘সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকি অনেকটা কম। বিশেষ করে এটি লবণাক্ত এবং তাপসহিষ্ণু হওয়ায় অনেক অনাবাদি জমিতেও এখন সূর্যমুখী চাষ করা সম্ভব। বর্তমানে প্রতি লিটার সূর্যমুখী তেল ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া আমরা এখন সূর্যমুখী তেল খাচ্ছি এবং বিক্রয় করছি। তাতে শরীরের কোন সমস্যা দেখা যাচ্ছে না।

তেল ক্রয় করতে আসা জহির কাজী বলেন, আমি নিয়মিত এখন এ তেল খাচ্ছি। সয়াবিন তেল খেয়ে গ্যাসসহ নানা রোগে ভুগতেছিলাম। তাছাড়া চোখের সামনে তেল তৈরী হচ্ছে । ভেজালমুক্ত তেল খেয়ে এখন ভাল আছি।

স্থ’ানীয় কৃষক ও কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গির হোসাইন বলেন, সূর্যমুখী ক্ষেতে অন্যান্য সবজি চাষ করায় কোন সমস্যা নাই। এতে কোনো রোগবালাই কিংবা সমস্যা হলে পরামর্শ করে দ্রæত সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে পারছি। তবে সমন্বিত চাষাবাদে সব কিছু একসঙ্গে করায় একটি বাড়তি শক্তি কাজ করে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আমরা বীজ থেকে তেল ভাঙ্গানো মেশিন পেয়েছি।

এছাড়া ৩৩ শতক জমিতে ৩০০ কেজি বীজ পাওয়া যায়। তাতে ৮০ কেজি তেল এবং ৩০০ কেজি খৈল পাওয়া যায়। এচাষে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষক দিন দিন ঝুকছে।

কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা বলেন, ‘আগে সূর্যমুখী উৎপাদন করলেও তেল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করতে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হতো। কৃষক যাতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো সময় সূর্যমুখী ভাঙিয়ে তেল সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারেন, সে জন্য প্রকল্পের পক্ষ থেকেই আধুনিক তেল সংগ্রহের মেশিন বসানো হয়েছে। এতে আমরা সরাসরি সূর্যমুখী বিক্রি না করে নিজেরাই তেল উৎপাদন করে বিক্রি করছি। এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ১০/১২ হাজার টাকা আর বিক্রয় হয় ৩০/৩৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া সূর্যমুখী ভাঙানোর পর যে খৈল পাচ্ছি, তা গরুর খাবার হিসেবেও বিক্রয় করছি।

এ ব্যাপারে রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তরুন কুমার বালা বলেন, আগে সূর্যমুখী উৎপাদন করলেও তেল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করতে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হতো কৃষকদের। কৃষক যাতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো সময় সূর্যমুখী ভাঙিয়ে তেল সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারেন, সে জন্য প্রকল্পের পক্ষ থেকেই আধুনিক তেল সংগ্রহের মেশিন বসানো হয়েছে। এতে কৃষক সরাসরি সূর্যমুখী বিক্রি না করে নিজেরাই তেল উৎপাদন করে বিক্রি করছে। সূর্যমুখীর চাষে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন কৃষক ঝুকছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে