সারাদেশ

সরকার কর্তৃক ভিডব্লিউবির কার্ডের আওতায় পঞ্চগড়ে বিনামূল্যের সরকারি চাল দরিদ্র অসহায় নারীদের সাহায্যার্থে বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অপরাধে জেলার বোদা উপজেলার ঝলইশালশিড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ১১ জন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যকে আটক করা হয়েছে।

গত সোমবার রাত ১১টায় অভিযান চালিয়ে ১১ ইউপি সদস্যকে আটক করেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।

আটক ইউপি সদস্যরা হলেন- বোদা উপজেলার ১নং ঝলই শালশিরি ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউ’পি সদস্য মো. খলিলুর রহমান, ২নং ওয়ার্ডের মো. হামিজ উদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ডের প্রিয় নাথ রায়, ৫নং ওয়ার্ডের সুনীল চন্দ্র রায়, ৬নং ওয়ার্ডের মো. দাহির উদ্দিন, ৭নং ওয়ার্ডের মো. খাদিমুল ইসলাম, ৮নং ওয়ার্ডের মো. মামুন ইসলাম এবং ৯নং ওয়ার্ডের মো. আশরাফুল ইসলাম, সংরক্ষিত ইউপি সদস্যা ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের শেফালী রাণী, ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের বিলকিস বেগম ও ৭, ৮ ,৯ নং ওয়ার্ডের রুপালী বেগম।

পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে ওই ইউনিয়নের ২৫৮ পরিবারকে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মোট ৫ মাসের মোট ১৫০ কেজি (প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে) চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। এ সময় উপকারভোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ৫০০-৬০০ করে টাকা আদায় করছিলেন ইউপি সদস্যরা। প্রতিবাদে পাঁচ শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন।

খবর পেয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার নজির, সেনাবাহিনীর একদল সদস্য ও বোদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সুবিধাভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ খতিয়ে দেখেন তারা। সত্যতা পেয়ে অভিযুক্তদের আটক করে সেনাবাহিনী। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। পরে রাতেই তাদের বোদা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সেনাবাহিনী বোদা ক্যাস্পের কমান্ডার আলভি জানান, ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের ভিডব্লিউবির চাল বিতরণে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের আদায় করা এক লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। আটককৃতদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসান ও থানা প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

হামিদুল ইসলাম নামে স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের এই ইউনিয়ন পরিষদে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে রয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগে সোমবার একই সঙ্গে ১১ জন ইউপি সদস্য আটক হয়েছেন। তাই তাদের বিচার কার্যক্রম চলা অবস্থায় আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে প্রশাসন যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’ উপকারভোগী হাসিনা ও মর্জিনা জানান, ‘আমাদের কাছ থেকে টানা ৫ মাসের চাল দেওয়ার নামে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। তাদের কথায় টাকা না দিলে চাল পাব না বলেছে। তাই আমরা টাকা দিয়েছি।’

বোদা ইউএনও শাহরিয়ার নজির বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি ও ঘটনাস্থলে পাওয়া আলামতের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারা একটি ফৌজদারি অপরাধ করেছে। এর বিচারের মাধ্যমে দেশে একটি অন্যতম নজির স্থাপন হবে।

বোদা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিম উদ্দীন জানান, সেনাবাহিনী ১১জন ইউপি সদস্যদের আটক করে বোদা থানায় হস্তান্তর করেছে। আটকদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ মঙ্গলবার জেল হাজতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে দুদক এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।