শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাকৃবিতে সুগন্ধি জাতের নতুন ধান জিএইউ ধান-৩ উদ্ভাবিত

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ২৯ মে ২০২৫, ১৭:২৪
গাকৃবিতে সুগন্ধি জাতের নতুন ধান জিএইউ ধান-৩ উদ্ভাবিত
ছবি: যায়যায়দিন

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রখ্যাত প্রজননবিদ অধ্যাপক ড. নাসরীন আক্তার আইভী'র নেতৃত্বে গবেষণার মাধ্যমে সম্প্রতি উদ্ভাবিত হয়েছে সুগন্ধি জাতের একটি নতুন ধান ‘জিএইউ ধান—৩’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের পর এটিই প্রথম নতুন জাত হিসেবে নিবন্ধিত হলো, যা গাকৃবির গবেষণায় এক নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এই নতুন জাতটি সুগন্ধিযুক্ত ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টি ও মানের দিক থেকে এটি একটি ব্যতিক্রমী সংযোজন হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এ জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে গাকৃবির মোট উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা ৯০টি তে পৌঁছালো যা বাংলাদেশের কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করলো।

1

প্রজননবিদ অধ্যাপক ড. নাসরীন আক্তার আইভী বলেন, গাকৃবির গবেষণা মাঠে দীর্ঘ ৪ বছর গবেষণা ও ফলন পরীক্ষার পর ২০২১ ও ২০২২ সালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের এ জাতটি মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরবর্তীতে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী কর্তৃক প্রস্তাবিত ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফলের সুপারিশের প্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড গত (২০ এপ্রিল ) এ জিএইউ ধান—৩ এর ছাড়পত্র দেয়।

এ ধানে আধুনিক উফশী ধানের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। চালে অধিক জিঙ্ক এবং লৌহ রয়েছে যা মানুষের শরীরকে একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধী করে জীবাণু ও ভাইরাস থেকে রক্ষা করে তেমনি শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরির মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।

এ জাতের ধানের চালের দানা চিকন ও লম্বা এ জিএইউ ধান—৩ তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে পরিপক্ব হয়, আমন মৌসুমে প্রায় ৩ মাস এবং বোরো মৌসুমে সাড়ে ৩ মাস পর উৎপাদন পাওয়া যায় যার ফলে অল্প সময়ে অধিক ফলন পেয়ে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন। অন্যদিকে এ ধানের গাছের আকার বড়, কান্ড মোটা ও কুশির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এটি থেকে অধিক পরিমাণ খড় পাওয়া যায় ফলে গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সাধারণ জাতের তুলনায় এটি গড়ে ১৫% বেশি ফলন দিতে সক্ষম যা বাংলাদেশের মতো ধান নির্ভর কৃষিভিত্তিক দেশে এর উপযোগিতা অনেক। উৎকৃষ্টমানের এ জাতের ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৫ টন থেকে ৬ টন যা একে অন্যান্য জাতের ধান থেকে বিশেষ স্থানে নিয়ে গিয়েছে।

এতে উপস্থিত অ্যামাইলেজ নামক এনজাইমের পরিমাণ শতকরা ২৬ ভাগ যা শরীরে শর্করা জাতীয় খাবারগুলোকে সহজে ভেঙে শরীরে শক্তি সরবরাহ ও হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। আবার সাধারণ চালের তুলনায় এতে জিঙ্কের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যা শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।

সুবাসযুক্ত ধানটি রান্নার সময় মনোহর সুবাস ছড়ায় ফলে ভোক্তাদের কাছে এর চাহিদা বাড়াবে। এছাড়া জলবায়ু সহনশীলতা ও রোগ—পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় এটি দেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশে চাষের জন্য উপযোগী ও লাভজনক একটি জাত। সার্বিক বিষয়ে জিএইউ ধান—৩ এর উদ্ভাবক ড. আইভী বলেন,“আজকের বিশ্বে খাদ্যের পরিমাণের পাশাপাশি গুণগত মানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের অপুষ্টি ও খনিজ ঘাটতি দূর করতে জিঙ্কসমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবন একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। জিএইউ ধান—৩ কেবল একটি নতুন জাত নয়, এটি পুষ্টি, উৎপাদন ও কৃষকের আর্থিক উন্নয়নের মাঝে একটি শক্ত সেতুবন্ধন। রপ্তানীযোগ্য এই জাতের মাধ্যমে দেশে পুষ্টিনির্ভর কৃষি বিপ্লবের সুস্পষ্ট সূচনা হয়েছে বলেও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি।”

গাকৃবির ভাইস—চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান এর অনুভূতি আরও গর্বিত করে তোলে এই সাফল্যকে। ভাইস—চ্যান্সেলর বলেন,“জিএইউ ধান—৩ শুধু একটি জাত নয়, এটি আমাদের কৃষি গবেষণার গৌরবময় প্রতীক। ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির জন্য এটি অপরিসীম অবদান রাখবে।”

উল্লেখ্য, এর আগে ড. আইভী লাল ও হলুদ পেঁপের ৪টি এবং ধান, টমেটো, লাউ, মটরশঁুটির ২টি করে মোট ১৩টি জাতের সফল উদ্ভাবন ঘটিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে