নীলফামারীর সৈয়দপুরে শহীদ তুলশীরাম সড়কের বেসরকারি হাসপাতাল গ্রীণ লাইফ ল্যাব এন্ড হসপিটালে অস্ত্রোপচারের সময় সোগরা (২৮) বেগম নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মৃত সোগরা বেগম ৪৫ দিনের গর্ভবতী ছিলেন। মূত্রনালীর রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হন। তাই গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত ১০টার দিকে স্বজনরা চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতাটিতে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াজেরা সিফাত জাহান শান্তা রোগীকে দেখে জানান তার মূত্রনালীতে ইনফেকশন হয়েছে। এজন্য দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন বলে রোগীর লোকজনকে জানান। এরপর স্বজনরা রোগীকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করান।
ওইদিনই দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে ডা. ওয়াজেরা নিজেই তার অস্ত্রোপচার শুরু করেন। এর আধা ঘন্টা পর সোগরা বেগমকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে নিজেদের অ্যাম্বুলেন্সে রংপুরে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এতে রোগীর লোকজন ক্ষিপ্ত হলে কৌশলে তাদের ম্যানেজ করে সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিমাংসা করে ধামাচাপা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোগীর পরিবারকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ঘটনাটি মিমাংসা করা হয়েছে। মিমাংসা হওয়ায় রোগীর স্বজনরাও সকাল হওয়ার আগেই লাশ বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু পরে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায় ও সংবাদকর্মীসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি প্রচার করলে এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
মৃত সোগরার ভাবী মোছা. তামান্না সংবাদকর্মীদের জানান, অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সোগরা ভালোই ছিল। নিজে হেঁটে হাসপাতালে এসেছে। চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে মৃত সোগরার স্বামী আরিফ প্রথমে কিছু বলতে রাজি না হলেও পরে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সংবাদকর্মীদের জানান, ‘যে যাওয়ার সে তো চলেই গেছে। তাকে তো আর ফিরে পাবো না। এখন ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধরে কি হবে? তারা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। তা সোগরার রেখে যাওয়া দুই সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগাব। এতে সোগরার আত্মা শান্তি পাবে।’
ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের ডা. ওয়াজেরা সিফাত জাহান শান্তার চেম্বার বন্ধসহ তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে। এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তার কোনো খোঁজ দিতে পারেননি। এ জন্য বিষয়টি নিয়ে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
গ্রীণ লাইফ ল্যাব এন্ড হসপিটালের ম্যানেজার শাহিনুর ইসলাম রোগী মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সংবাদকর্মীদের সাথে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে শুধু বলেন, ‘নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে। এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হুদা জুয়েল নওগাঁয় আছেন। তিনি আসলে তার কাছ থেকেই সব জেনে নেবেন।’
গ্রীণ লাইফ ল্যাব এন্ড হসপিটালের পরিচালক নাজমুল হুদা জুয়েল মুঠোফোনে সংবাদকর্মীদের জানান, ‘রোগীর অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল ছিল। আমরা অপারেশন না করলেও রোগী হয়তো মারা যেত। তবুও আমরা চেষ্টা করেছি তাকে বাঁচানোর। মারা যাওয়ায় তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। এরপর তো আর কারো কোন অভিযোগ থাকার কথা নয়।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন থেকেই সৈয়দপুরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এরকম অনেক ল্যাব ও হাসপাতালে প্রসূতিসহ বিভিন্ন রোগীর অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
দায়িত্বরত স্বাস্থ্য বিভাগ তাৎক্ষনিক সেগুলো সিলগালাসহ আর্থিক জরিমানা করলেও বাস্তবিক অর্থে কোনো কার্যকরী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এলাকার সচেতন মহলে এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ জানিয়েছেন।
সেই সঙ্গে জোর দাবি জানানো হয়েছে, এসব ল্যাব ও হাসপাতাল চালাবার জন্য যাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান, প্যাথলোজিস্ট, সনোলোজিস্ট, পরীক্ষা-নীরিক্ষার প্রয়োজনীয়
রিজিয়ন, চিকিৎসাসেবা, জনবল, নার্স, সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের ব্যবস্থা নেই, তাদের ল্যাব ও হাসপাতাল জরুরিভাবে স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
না’হলে এরকম অপমৃত্যুর হাত থেকে অত্র এলাকার রোগীদের রক্ষা করা সম্ভব হবে না।