সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে টানা বৃষ্টি

বন্যার ঝুঁকিতে সিলেট, বাড়ছে নদ-নদীর পানি 

যাযাদি ডেস্ক
  ৩১ মে ২০২৫, ১৬:২২
বন্যার ঝুঁকিতে সিলেট, বাড়ছে নদ-নদীর পানি 
সিলেটের নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। পাশাপাশি সিলেটেও চলছে থেমে থেমে বৃষ্টি। তবে কোনো নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।

আজ শনিবার (৩১ মে) গোয়াইনঘাট উপজেলার গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের অংশবিশেষ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ওই সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে।

1

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। সারি-গোয়াইন ও ধলাই নদের পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে আজ সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটাই সতর্কবার্তা। ভারতে বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢল সীমান্তের নদ-নদী দিয়ে সিলেটে আসে।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলে দ্রুত পানি বাড়ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলেও পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র জাফলং ও বিছনাকান্দি এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব স্থানে পর্যটকদের ভ্রমণ করতে না যাওয়াটাই ভালো বলে স্থানীয় লোকজন পরামর্শ দিয়েছেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী আজ বিকালে জানান, উপজেলার গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের নিচু অংশের অংশবিশেষ প্লাবিত হয়েছে। তবে বৃষ্টি কমে এলেই পানি নেমে যাবে। এখনো উপজেলার কোনো এলাকা প্লাবিত না হলেও তাঁরা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় কিছু কিছু এলাকায় পানি বাড়ছে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পানি বৃদ্ধি পেলেও কারও পানিবন্দী অবস্থায় থাকার খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে; পাশাপাশি জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনা খাবারের মজুত রাখা হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার জানান, গতকালের চেয়ে আজ পানি কিছুটা কমেছে। নিম্নাঞ্চলে পানি থাকলেও কোনো গ্রাম বা এলাকা প্লাবিত হয়নি। উপজেলায় ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো কারও আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পরে আজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১ মিলিমিটার এবং সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টি এখনো অব্যাহত।

এদিকে আকস্মিক অতিবৃষ্টির কারণে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জরুরি যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে বলে এক অফিস আদেশে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের সচিব আশিক নূর।

অফিস আদেশে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় তলার ২০৫ নম্বর কক্ষে এ কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়। এ কক্ষের দায়িত্বে আছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর। তাঁর মুঠোফোন নম্বর: ০১৭১১৯০৬৬৪৭। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে থাকবেন প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ একলিম আবদীন।

সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড সচিবদের নিজেদের অধিক্ষেত্রে অবস্থান করে সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুততম সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও অফিস আদেশে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে