আর কয়েক দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। শহরে থাকা লোকজন তাদের ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এখনো ফেরেননি। সদরপুর উপজেলার পশুর হাটগুলো সাজানো হয়েছে সারি সারি বাঁশ দিয়ে।
তবে দেশে চলমান নিম্নচাপের কারনে কয়েকদিন ধরা চলা বৃষ্টির কারনে হাটগুলোর ইজারা নেওয়া মালিকরা পড়েছেন বেশ বিড়ম্বনায়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও বিক্রেতারা তুলেছেন তাদের পশু।
আজ শনিবার (৩১ মে) সদরপুর উপজেলার একটি বৃহৎ গরু ছাগলের হাট হিসেবে পরিচিত সাড়ে সাতরশি বাজার। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় এক বাসিন্দা মো. সাঈদ দুইটি দেশী প্রজাতের গরু এনেছেন।
প্রায় ৩ ঘণ্টা দর দাম করে তিনি তার ছোট গরুটি ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তার সঙ্গে থাকা আরেকটির দাম চাচ্ছেন এক লাখ টাকা। কিন্তু প্রায় ৫টা পর্যন্ত ওই গরুর দাম দরে মেলে না।হাটে প্রায় ৩ শতাধিক ছোট মাঝারী ও বড় মাপের গরু তুলেছেন বিক্রেতারা। দুপুরে বেপারীদের আনাগোনা থাকলেও স্থানীয় ক্রেতাদের উপস্থিতি খুব কম বলে জানাচ্ছেন তারা।
অন্য বছরের তুলনায় এবছর গরু ছাগলের উৎপাদন বেশি রয়েছে। হাটে গরুর পাশাপাশি ছাগলের আমদানি রয়েছে অনেক। হাটে বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারী গরুর চাহিদা বেশি ক্রেতাদের।
দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন পাইকাররা এসে স্থানীয় এ হাট থেকে গরু ছাগল ক্রয় করে বেশি লাভের আশায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তুলনামুলকভাবে পাইকারের সংখ্যাও এবছর কম।সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার বাজারে দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের গরু ৭৫ থেকে ৮০ হাজারের ওপরে এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও তুলনামূলক কম হচ্ছে। বড় গরুর তেমন কোনো সারা মিলছে না।
সতের রশি গ্রামের গরু বিক্রেতা আইয়ুব হাওলাদার জানান, ‘আমি ৪টি গরু পালন করে হাটে এনেছি বিক্রি করতে। এ বছর গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হয়েছে। ভালো দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে।’
সদরপুর উপজেলার পশ্চিম শ্যামপুর গ্রামের ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও দেশি জাতের একটি ষাঁড় কিনেছি। গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা কম মনে হচ্ছে।’
সদরপুর উপজেলার সাড়ে সাতরশি গ্রামের বিক্রেতা আবু সালেহ মুসা জানান, ‘গত বছর কোরবানির ঈদের পর ছয়টি গরু কিনেছিলাম সাড়ে ৪ লাখ টাকায়। প্রতিটা গরুর জন্য দিনে খাওয়া খরচ হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বছরে একটা গরু বড় করতেই খরচ হয়ে যায় ৮০-৯০ হাজার টাকা। সমিতির ঋণের টাকা সুদসহ দিতে হবে। বাজারে যে গরুটি এনেছি এখন গরু বিক্রি করে সব টাকা শোধ করা লাগবে।’
সাড়ে সাতরশি গরু হাটের ইজারাদার মো. বাহালুল মাতুব্বর বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার গরুর সংখ্যা বেশি। বিক্রি হচ্ছে মোটামুটি। প্রতি হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসছেন গরু ছাগল কিনতে। হাটে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি হাট কমিটির পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারীর ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলা প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, জেলার ৯টি উপজেলায় ১ লাখ ১০ হাজার গরু, ছাগল ও মহিষ আসন্ন কোরবানির জন্য মোটাতাজা করা হয়েছে, যা জেলার চাহিদার চেয়েও বেশি। আশা করছি খামারিরা তাদের পালনকৃত পশুর ন্যায্যমূল্য পাবেন।